বাংলাদেশ ব্যাংক আর্থিক লেনদেনের জন্য ‘টাকা পে কার্ড’ চালুকরেছে। ‘Taka Pay card’ হল বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড। এটিকে লোকাল ডেবিট কার্ড বলা যায়। ভবিষ্যতে ‘টাকা পে কার্ড’ ইন্টারন্যাশনাল অর্থনৈতিক লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যবহার করা যেতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রচলিত ৮টি ব্যাংক (TakaPay card) ‘টাকা পে’ কার্ড ইস্যু করছে।
টাকাপে কার্ড গ্রাহকদের সকল ধরনের লেনদেনের খরচ সাশ্রয় করবে। পার্সোনালি আমি মনে করি Takapay card ব্যাংকিং খাতের জন্য একটি বড় অর্জন, কারণ TakaPay Card দেশকে স্মার্ট বাংলাদেশের দিকে আরো এক ধাপ এগিয়ে নিতে ভূমিাকা রাখবে।
আজকের এই আর্টিকেলে যে সকল প্রশ্নের উত্তর পাবেন সেই প্রশ্নগুলো হল: (TakaPay card) ‘টাকা পে’ কার্ড কি?, টাকা পে কার্ড কিভাবে কাজ করে?, টাকা পে কার্ড আবেদন করার নিয়ম কি?, টাকা পে কার্ড চার্জ কত? ‘টাকা পে’ কার্ডের সুবিধা ও অসুবিধা গুলো কি কি?। সুতরাং (TakaPay card) ‘টাকা পে কার্ড’ এর আদ্যোপান্ত জানতে হলে, আজকের এই আর্টিকেল মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
টাকা পে কার্ড কি?
‘টাকা পে কার্ড’ হলো বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড। বাংলাদেশ ব্যাংকের নিয়ন্ত্রণাধীন বাংলাদেশ ডিজিটাল কার্ড’ টাকা পে’ National Payment Switch Bangladesh (NPSB) এর মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। বর্তমান সময়ে ‘টাকা পে কার্ড’ ধারী সর্বস্তরের জনগণ শুধুমাত্র দেশের অভ্যন্তরে দেশীয় মুদ্রায় লেনদেন করতে পারবেন। পরবর্তীতে ‘টাকা পে কার্ড’ কর্তৃপক্ষ বিভিন্ন দেশের সাথে কোলাব্রেট করে নিলে তখন যে কেউ চাইলে ‘Taka Pay’ card ব্যবহার করে ডলারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক লেনদেন করার সুবিধা পাবেন। (Taka Pay card) বাংলাদেশের ডিজিটাল পেমেন্ট লোকাল ডেবিট কার্ড। এ ধরনের কার্ড পৃথিবীর অন্যান্য দেশেও জনপ্রিয়তা রয়েছে যেমন;
- ভারতের RuPay
- শ্রীলঙ্কার LankaPay
- পাকিস্তানের PakPay
- সৌদি আরবের Mada ইত্যাদি।
টাকা পে কার্ড সুবিধা ও অসুবিধা কি? কি?
পৃথিবীতে যে সকল ডেবিট কার্ড কিংবা ক্রেডিট কার্ড যেমন, মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড রয়েছে সে সকল কার্ডের বিভিন্ন ধরনের সুবিধা এবং অসুবিধা আছে। ঠিক একই ভাবে ‘টাকা পে কার্ড’ (TakaPay Card) ব্যবহারের কিছু সুবিধা এবং অসুবিধা রয়েছে। ‘টাকা পে’ কার্ড ব্যবহারের সুবিধা এবং অসুবিধা নিচে বিস্তারিত আলোচনা করা হলো:
টাকা পে কার্ড সুবিধা | টাকা পে কার্ড অসুবিধা |
বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হবে না। ভিসা, মাস্টার কার্ড বা অন্যান কার্ডের ব্যবহারে বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করতে হয় | এটি একটি Local Debit Card. অর্থাৎ বর্তমান সময়ে ‘টাকা পে’ কার্ড শুধুমাত্র দেশের ভেতরে ব্যবহারযোগ্য। |
টাকা পে কার্ড ব্যবহার ফি বা চার্জ কম। | প্রচলিত সকল ব্যাংকে এখনো এটি চালু হয়নি। |
নির্দিষ্ট সময় পর আন্তর্জাতিক লেনদেন অর্থাৎ ডলারে লেনদেন করা যাবে। | ‘টাকা পে’ কার্ডের মাধ্যমে International E Commerce site ক্রয় বিক্রয় করা যাবে না। |
ডলারে লেনদেন করতে এই কার্ডে কোন ফি বা চার্জ দিতে হবে না। | ‘টাকা পে কার্ড’ সবেমাত্র শুরু হওয়ায় এটি ব্যবহারে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতা কম। |
টাকা পে কার্ডের সুবিধাঃ
দেশের অর্থনৈতিক পরিস্থিতি এবং রিজার্ভ সংকটের চাপ মোকাবেলা সেই সঙ্গে দেশের নাগরিকদের অর্থনৈতিক স্বচ্ছলতার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশ ব্যাংক ডিজিটাল কার্ড অর্থাৎ ‘টাকা পে কার্ড’ ব্যবস্থা চালু করেছে। এতে করে দেশের প্রচলিত ভিন্ন দেশের বিদেশী কার্ড অর্থাৎ মাস্টার কার্ড, ভিসা কার্ড, ডুয়েল কারেন্সি কার্ড ব্যবহারে যে ডলার খরচ করতে হয় সেই ডলার মূল্য থেকে দেশীয় টাকায় রূপান্তর করতে মূলত ‘টাকা পে’ কার্ডের উৎপত্তি।
যার ফলে সাধারণ নাগরিকগণ কার্ডে পেমেন্ট করার ক্ষেত্রে দেশীয় মুদ্রায় পেমেন্ট করলে অতিরিক্ত চার্জ দিতে হবে না। এবং যে সকল ব্যাংক ভিন্ন দেশের বিভিন্ন ধরনের কার্ড সার্ভিস দিয়ে থাকে তাদেরকেও বিদেশী কার্ডগুলোর জন্য যে সকল চার্জ দিতে হতো সে সকল চার্জ আর দিতে হবে না। এর ফলে ডলারের পরিবর্তে দেশীয় মুদ্রার অর্থনৈতিক লেনদেনের জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের রিজার্ভ এবং ডলার সংকট থেকে কিছুটা হলেও অর্থনৈতিক উন্নতি হবে।
এছাড়াও ‘টাকা পে’ কার্ডের অনেক সুবিধা রয়েছে। যেহেতু টাকা পে কার্ড কিছুদিন হল চালু হয়েছে, তাই বলা যায় ভবিষ্যতে এই কার্ডের সুবিধা গুলো ক্রমান্বয়ে বৃদ্ধি পাবে। আগামীতে (TakaPay card) ‘টাকা পে’ কার্ড এর মাধ্যমে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক পরিবর্তন আসবে।
প্রিয় পাঠক আপনাদের কথা চিন্তা করে ‘টাকা পে’ কার্ডের উল্লেখযোগ্য সুবিধা গুলো আমি নির্দিষ্ট পয়েন্ট আকারে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। প্রিয় পাঠক! ‘টাকা পে’ কার্ড নিয়ে আজকের এই আর্টিকেলটি যদি সময় নিয়ে পড়েন তাহলে আপনি অবশ্যই ‘টাকা পে’ কার্ডের সকল সুবিধা এবং অসুবিধা সম্পর্কে সহজেই বুঝতে পারবেন। নিচে টাকা পে কার্ডের সুবিধা গুলো আলোচনা করা হলো।
টাকা পে কার্ডের নিরাপত্তা বেশি: যেহেতু এটি দেশীয় প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছে তাই বলা যায় বহির্বিশ্বের বিভিন্ন ক্রেডিট কিংবা ডেভিড কার্ডের তুলনায় ‘টাকা পে’ কার্ডের লেনদেন অনেকটাই নিরাপদ। কেননা ‘টাকা পে’ কার্ডে অত্যাধুনিক ম্যাগনেটিক স্ট্রিপের পাশাপাশি ইলেকট্রিক্যাল ইএমভি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হয়েছে।
আপনি হয়তো অবশ্যই জানেন যে ইএমভি প্রযুক্তি হলো একটি উন্নত প্রযুক্তি যা ক্রেডিট কার্ড কিংবা ডেবিট কার্ড এর লেনদেনের তথ্যকে আরও সিকিউর এবং নিরাপদ রাখে। ইএমভি প্রযুক্তি ব্যবহার করে লেনদেন করার জন্য গ্রাহকের ‘টাকা পে’ কার্ডের পিছনে থাকা চিপের তথ্য ব্যবহার করা হয়। ‘টাকা পে’ কার্ডের তথ্যটি ইলেকট্রনিকভাবে পরিবর্তন করা কোনভাবেই সম্ভব নয়। তাই বলা যায় (TakaPay card) ‘টাকা পে’ কার্ডের নিরাপত্তা অন্যান্য বিদেশী কার্ডের তুলনায় অনেক বেশি।
টাকা পে কার্ডে ব্যয় কম: টাকা পে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের খরচ ভিসা, মাস্টারকার্ডের তুলনায় কম। বাংলাদেশ ব্যাংক বলছে, ‘টাকা পে’ কার্ডের মাধ্যমে প্রচলিত ভিসা কিংবা মাস্টার কার্ডের চেয়ে খরচ অন্তত ৫-৬ কমে যাবে। এর কারণ হলো, টাকা পে কার্ডের লেনদেন পরিচালনার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকের নিজস্ব নেটওয়ার্ক ব্যবহার হবে। মধ্যস্থতাকারী প্রতিষ্ঠানের সহযোগিতা না থাকায়ক টাকা পে কার্ডের মাধ্যমে লেনদেনের খরচও কম হবে।
টাকা পে কার্ডের চাহিদা বৃদ্ধি: এই কার্ডটির সূচনা সবেমাত্র শুরু হলেও ‘টাকা পে’ কার্ডের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাধারণত এই কার্ডের সুবিধা এবং নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে বাংলাদেশী জনগণের মধ্যে ব্যাপক চাহিদার প্রকাশ পেয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রচলিত ৮টি ব্যাংক ‘টাকা পে কার্ড’ ইস্যু করার সুযোগ দিয়ে থাকে।
তবে বর্তমান সময়ে ‘টাকা পে কার্ডের কোন এটিএম বুথ না থাকলেও ভবিষ্যতে যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করতে পারবেন। দেশের যেকোনো পয়েন্ট অব সেলস (POS) থেকে ‘টাকা পে কার্ড’ দ্বারা কেনাকাটা করতে পারবেন। এমনকি ইন্টারনেট ও মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করতে টাকা পে (TakaPay) কার্ডের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে।
টাকা পে কার্ডের এক্সট্রা সুবিধাগুলো হলো:
- যেকোনো এটিএম বুথ থেকে টাকা উত্তোলন করা যাবে।
- পয়েন্ট অব সেলস (POS) থেকে ‘টাকাপে’ দিয়ে কেনাকাটা করা যাবে।
- সহজেই মোবাইল ব্যাংকিং সেবা গ্রহণ করা যাবে।
- ক্রেডিট/ডেবিট কার্ডের সুবিধা পাওয়া যাবে।
টাকা পে কার্ডের অসুবিধাঃ
টাকা পে কার্ডের কিছু সাময়িক অসুবিধাও রয়েছে। টাকা পে কার্ডের অসুবিধাগুলো স্টেপ-বাই-স্টেপ তুলে ধরা হলো:
গ্রহণযোগ্যতা: টাকা পে কার্ড নতুন হওয়াতে এখনও দেশে কিংবা বিদেশের অনেক জায়গায় গ্রহণযোগ্য নয়। বিশেষ করে, ছোট দোকান, শপিংমল ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে ‘টাকা পে কার্ড’ (TakaPay Card) চালু হয়নি।
অভিজ্ঞতা কম: যেহেতু ‘টাকা পে’ কার্ড নতুন একটি ডেবিট কার্ড তাই, এই কার্ডের ব্যবহারে গ্রাহকদের অভিজ্ঞতাও নতুন। এতে করে ব্যবহারকারীদের একটু ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
অফার নেই: টাকা পে কার্ডের মাধ্যমে বিদেশি মুদ্রায় লেনদেন করা যায়না এছাড়াও, এই কার্ডে মাধ্যমে পেমেন্ট করলে ভিসা, মাস্টার কার্ডের মত বিভিন্ন ধরনের অফার কিংবা ছাড় পাওয়া যায় না।
টাকা পে কার্ড চার্জ
আমি প্রথমেই বলেছি ‘টাকা পে কার্ড’ হচ্ছে বাংলাদেশের জাতীয় ডেবিট কার্ড। যেহেতু এই কার্ড সরকারি পৃষ্ঠপোষকতায় পরিচালনা হবে তাই ‘টাকা পে কার্ড চার্জ কত’ হবে তা সরকারি নির্দেশনা ছাড়া বলা সম্ভব নয়। তবে সবচেয়ে ভালো দিক হচ্ছে (Taka pay card) টাকা পে কার্ড দেশীয় প্রযুক্তিতে পরিচালনা হবে এবং এটির সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ থাকবে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে, তাই নিঃসন্দেহে বলা যায় ‘ভিসা’ কিংবা ‘মাস্টার কার্ড’ অথবা অন্যান্য কার্ডের তুলনায় ‘টাকা পে’ কার্ডের চার্জ অনেক কম হবে বলে আশা করা যায়।
এরপরেও টাকা পে কার্ডের চার্জ কত হবে তা সম্পর্কে জানতে চাইলে আমরা একটি খসড়া পেয়েছি, তবে সেটি এখনও চুড়ান্ত হয়নি। টাকা পে কার্ডের বাৎসরিক চার্জ কত তা দেখে নিন।
কার্ডের নাম | বাংলায়: ‘টাকা পে’ | ইংরেজিতে: Taka Pay |
কার্ডের ধরন | ডেবিট কার্ড |
বাৎসরিক চার্জ | বিনামূল্যে (প্রথম বছর) | ভ্যাট সহ ৪৬০ টাকা (দ্বিতীয় বছর থেকে) |
ব্যাংক প্রতি লেনদেন চার্জ | ৮টি কিউ-ক্যাশ সদস্য ব্যাংক = ১১.৫০ টাকা |
অন্যান্য ব্যাংক প্রতি লেনদেন চার্জ | ১৭.২৫ টাকা। |
বিষেশ দ্রষ্টব্য: টাকা পে কার্ডের এই চার্জ এখনও চূড়ান্ত করা হয়নি। নতুন কোন আপডেট পেলে অবশ্যই জানানো হবে। আর অবশ্যই এই আর্টিকেলের নিচে আপনার ইমেইল সাবস্ক্রাইব করুন যাতে আপনি নতুন আপডেট পেতে পারেন
টাকা পে কার্ড বাংলাদেশ ব্যাংক
প্রথম দিকে ‘টাকা-পে’ কার্ড ইস্যু করার সুযোগ পাচ্ছে।
- সোনালী ব্যাংক
- বেসরকারি খাতের ব্র্যাক ব্যাংক
- দি সিটি ব্যাংক
- ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল)
- ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ
- ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)
- ডাচ-বাংলা ব্যাংক
- মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
টাকা পে কার্ড নেওয়ার উপায়
অনলাইনে টাকা পে কার্ড আবেদন
টাকা পে কার্ড সোনালী ব্যাংক
টাকা পে কার্ড ব্র্যাক ব্যাংক
টাকা পে কার্ড সিটি ব্যাংক
টাকা পে কার্ড ইস্টার্ন ব্যাংক (ইবিএল)
টাকা পে কার্ড ইসলামী ব্যাংক
টাকা পে কার্ড ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)
টাকা পে কার্ড ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি)
টাকা পে কার্ড ডাচ বাংলা ব্যাংক
টাকা পে কার্ড মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক
উপসংহার
আজকের এই আর্টিকেলে ‘টাকা পে’ কার্ড (TakaPay) সম্পর্কিত প্রয়োজনীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি (Taka Pay) টাকাপে কার্ড সংক্রান্ত সকল প্রশ্নের উত্তর পেয়ে গেছেন।
তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে স্মার্ট বাংলাদেশে বিনির্মানে দেশের টেকনোলজি অনেক উন্নত হচ্ছে আর তারই আরেকটি উদাহরণ হচ্ছে বাংলাদেশে ডিজিটাল পেমেন্ট কার্ড অর্থাৎ (Taka Pay) ‘টাকা পে’ কার্ড।
প্রশ্ন: টাকা পে কার্ড কবে চালু হয়?
উত্তর:
প্রশ্ন: টাকা পে কার্ড কি কিভাবে কাজ করে?