সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে ১৩টি প্রশ্নের উত্তর যা সকলের জানা অত্যন্ত জরুরি। সর্বজনীন পেনশন স্কিম কী? এবং পেনশন ব্যবস্থা কীভাবে কাজ করবে, এ বিষয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন যে কারো মনে আসতে পারে। তাই আজকের এই আর্টিকেলে সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে এমন ১১টি প্রশ্ন এবং সেগুলোর উত্তর তুলে ধরা হলো।
বাংলাদেশ সরকার সর্বস্তরের সকল নাগরিকদের পেনশন ব্যবস্থার আওতায় আনতে সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করছে। তবে অনেকেই গুগলে জানতে চায় সর্বজনীন পেনশন স্কিম আসলে কী এবং পেনশন স্কিম কীভাবে কাজ করবে।
তাই সকলকে অবহিত করার জন্য ইউপেনশন ওয়েবসাইটে দেওয়া ১১টি সংক্ষিপ্ত প্রশ্নের উত্তর নিয়ে এই আর্টিকেলে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম কী
বাংলাদেশ সরকার দেশের কর্মক্ষম সকল মানুষকে পেনশন সুবিধার আওতায় নিয়ে আসার জন্য সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি (স্কিম) চালু করতে যে আইন পাশ করেছে মূলত তাকেই সর্বজনীন পেনশন বলা হয়।
উল্লেখ্য যে, কেবলমাত্র ১৮ থেকে ৫০ বছর বয়সী বাংলাদেশী নাগরিক সর্বজনীন পেনশন স্কিম আবেদন করতে পারবেন এবং ৬০ বছর বয়স হলেই পেনশন পেতে থাকবেন।
সরকারি চাকরিজীবী পেনশন আবেদন
সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ জানতে চেয়েছিলেন, সরকারি চাকরিজীবী নাগরিকগণ কি সর্বজনীন পেনশন স্কিম আবেদন করতে পারবে?
উত্তর হল: না। বর্তমান সময়ে আপাতত সরকারি গেজেট পুনরায় প্রজ্ঞাপন জারির পূর্বে যেকোনো ধরনের সরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীরা সর্বজন পেনশন স্কিম আবেদ করতে পারবেন না।
স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে কর্মচারী পেনশন আবেদন
অনেকে আছে যারা প্রশ্ন করেন, স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মচারীগণ কি সর্বজনীন পেনশন স্কিমে আবেদন করতে পারবে। উত্তর হলো না। সরকারি কিংবা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কোন কর্মচারী সর্বজনীন পেনশন স্কিম আবেদন বা অংশগ্রহণ করতে পারবে না।
পেনশন ব্যালেন্স চেক করার উপায়?
আমাদের মধ্যে অনেকে আছে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে প্রতি বছরে লাভ সহ কত টাকা জমা হলো তা চেক করতে চায়। যিনি পেনশন একাউন্ট তৈরি করেছেন, একাউন্ট তৈরি করার সময় তাকে একটি সর্বজনীন পেনশন একাউন্টের ইউনিক আইডি দেয়া হয়েছিল।
সেই পেনশন আইডি দিয়ে ইউনিভার্সাল পেনশন (Universal Pension) ওয়েবসাইটে প্রবেশ করে খুব সহজেই বছর শেষে চাঁদা দেয়া টাকার মূল পরিমান এবং মুনাফাসহ কত টাকা সঞ্চয় হয়েছে তা চেক করতে পারবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিম নম্বর গ্রহণ
বিভিন্ন কারণে একজন কর্মচারী কিংবা কর্মকর্তাকে তার বর্তমান চাকরি পরিবর্তন করতে হতে পারে। সে ক্ষেত্রে বর্তমান চাকরি পরিবর্তন করার পর নতুন পেনশন নাম্বার নিতে হবে কি না এ সম্পর্কে যদি জানতে চান তাহলে আর্টিকেলের এই সেকশনে মনোযোগ দিন।
দেখুন, আপনার বর্তমান চাকরি পরিবর্তন করে নিজের প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যবসা-বাণিজ্য শুরু করতে পারেন অথবা নতুন কোন চাকরিতে নিযুক্ত হতে পারেন তাতে কোন সমস্যা নেই।
তবে সুসংবাদ হলো, চাকরি পরিবর্তন করলে বা চাকরি ছেড়ে দিলেও নতুন পেনশন নম্বর গ্রহণ করার প্রয়োজন নেই। শুধু জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করলে ভাল হয়।
৬০ বছর পর সর্বজনীন পেনশন এর টাকা কিভাবে পাবেন?
এটি একটি সাধারণ প্রশ্ন অর্থাৎ যে কোন চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তি প্রশ্ন করতেই পারে যে ৬০ বছর পর সর্বজনীন পেনশনের টাকা তিনি কিভাবে পাবেন।
- যখন চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তির বয়স ৬০ বছর পূর্ণ হয়ে যাবে এরপর থেকে চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তির নামের যেকোনো ব্যাংক একাউন্টে অথবা মোবাইল ব্যাংকিং ফিনান্সিয়াল এর মাধ্যমে মাসিক হারে পেনশন পেতে থাকবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মাসিক চাঁদার হার কত?
বর্তমানে সর্বজনীন পেনশন প্রক্রিয়ার চারটি স্কিম রয়েছে। দেশের বিভিন্ন নাগরিকদের সুবিধার্থে এই চারটি পেনশন স্কিম ক্যাটাগরি চালু করেছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ। হয়তো ভবিষ্যতে আরো পেনশন স্কিম চালু করবে। তবে সকল পেনশন স্কিম গুলোর মাসিক চাঁদার হার ভিন্ন বা আলাদা রয়েছে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মাসিক চাঁদের হার সম্পর্কে জানতে নীচে দেয়া তথ্যগুলো পড়ে নিন।
- সমতা সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন।
- সুরক্ষা পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন।
- প্রগতি পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন।
- প্রবাস পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন।
অনলাইনে সর্বজনীন পেনশন আবেদন করা যাবে?
যেহেতু টাকা পয়সার ব্যাপার তাই আমাদের দেশে এখনো অনেকেই অনলাইন লেনদেন তেমন একটা গুরুত্ব দেয় না। তবে তথ্যপ্রযুক্তির প্রচার-প্রসারতা এবং অগ্রগতির ফলে বর্তমান সময়ে অনলাইনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম নিবন্ধন করতে পারবেন।
আবার যারা অনলাইন লেনদেন সম্পর্কে সচেতন রয়েছে অর্থাৎ যারা বোঝে তারাও প্রশ্ন করে থাকেন যে, শুধুমাত্র অনলাইনে পেনশন নিবন্ধন করলেই হবে! নাকি কোন ধরনের কাগজপত্র জমা দিতে হয়?
উত্তর হল: মজার ব্যাপার হলো ইউনিয়ন পেনশন সকলের সুবিধার্থে শুধুমাত্র অনলাইনে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আবেদন করলেই হবে। কোন ধরনের হার্ড কপি অর্থাৎ কাগজপত্র জমা দেওয়ার প্রয়োজন নেই। শুধু অনলাইনে পেনশন নিবন্ধন করে প্রতিমাসে নির্দিষ্ট চাঁদার টাকা জমা দিতে হবে।
গৃহিণীরা কোন পেনশন স্কিমে অংশ নিতে পারবে?
যেহেতু গৃহিণীরা চাকরিজীবী নয়, তাই অনেক গৃহিণী রয়েছে তারা প্রশ্ন করেন যে, আমরা তো চাকরিজীবী নই আমরা তো ঘরের কাজ করি তাহলে আমরা কোন পেনশন স্কিমে আবেদন করতে পারব? সরকার আপনাদেরকে নিরাশ করেনি।
গৃহিণীদের জন্য রয়েছে আকর্ষণীয় পেনশন স্কিম। যেহেতু গৃহিণীরা স্বকর্মে নিয়োজিত তাই তাদের জন্য সুরক্ষা পেনশন স্কিম চালু রয়েছে। গৃহিণীরা চাইলে সুরক্ষা পেনশন স্কিম আবেদন করতে পারেন। সুরক্ষা সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে বিস্তারিত জেনে নিন।
এনআইডি কার্ড ছাড়া পেনশন আবেদন করা যাবে?
দেশে এমন নাগরিকের সংখ্যা অনেক রয়েছে যাদের ১৮ বছর পূর্ণ হয়ে গিয়েছে কিন্তু এখন পর্যন্ত এনআইডি কার্ড পাননি বা এন আইডি কার্ড আবেদন করেননি। তারাও চাইলে এনআইডি কার্ড ব্যতীত সর্বজনীন পেনশন এ অংশগ্রহণ করতে পারবেন।
বিশেষ দ্রষ্টব্য: তবে সেক্ষেত্রে আপনার বৈধ পাসপোর্ট থাকতে হবে। পাসপোর্ট দিয়ে পেনশন আবেদন হয়ে গেলে এনআইডি কার্ড আবেদন করে অথবা এন আই ডি কার্ড উত্তোলন করে জমা দিতে হবে।
প্রবাসে থেকে পেনশন আবেদন কিভাবে করতে হয়?
আপনি যদি একজন প্রবাসী হয়ে থাকেন তাহলে আপনি হচ্ছেন বাংলাদেশের একজন রেমিটেন্স যোদ্ধা। প্রবাসীদের জন্য রয়েছে দারুন পেনশন স্কিম। প্রবাসীদের সুবিধার্থে প্রবাস পেনশন স্কিমে শুধুমাত্র পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পেনশন নিবন্ধন করা যাবে।
তবে অনেক প্রবাসী রেমিটেন্স যোদ্ধা রয়েছে যারা প্রশ্ন করেছেন, পাসপোর্ট নাম্বার দিয়ে পেনশন আবেদন করার কত কতদিনের মধ্যে ভোটার আইডি কার্ড জমা দিতে হয়?
এগুলো পড়তে পারেন,
- সুরক্ষা পেনশন স্কীম রেজিস্ট্রেশন-কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- প্রবাস পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন-কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- প্রগতি পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন- কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- সমতা পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন- কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন প্রসেস স্টেপ বাই স্টেপ
দেখুন সাময়িকভাবে এনআইডি ব্যতীত পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পেনশন নিবন্ধন করতে পারবেন ঠিকই, অবশ্যই আপনাকে জাতীয় পরিচয় পত্র বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতেই হবে।
সাধারণত এনআইডি কার্ড তৈরিতে রাষ্ট্রীয়ভাবে যুক্তিসঙ্গত যতটুকু সময় প্রয়োজন সে সময়ের মধ্যে এনআইডি বাধ্যতামূলকভাবে জমা দিতে হবে। অন্যথায় আপনার অ্যাকাউন্ট ফ্রিজ হয়ে যাবে। পরবর্তীতে সেই একাউন্ট রিয়াক্টিভ করতে আপনাকে হয়তো ভোগান্তি পোহাতে হতে পারে।
তাই যত দ্রুত সম্ভব পাসপোর্ট নম্বর দিয়ে পেনশন আবেদন এবং মাসিক চাঁদা দেবার পরপরই এনআইডি কার্ড আবেদন এবং তা সংগ্রহ করে ইউনিভার্সাল পেনশন ওয়েবসাইটে জমা দেওয়ার জন্য পদক্ষেপ গ্রহণ করবেন।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমের যাবতীয় খরচ কে বহন করবে?
দেখুন যেহেতু এটি সর্বজনীন পেনশন প্রক্রিয়া স্বয়ং সরকার চালু করেছে তাই, জাতীয় পেনশন স্কিমের যাবতীয় ব্যয় সরকার বহন করবে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশ গ্রহণ করা ব্যক্তিদের জমানো টাকা কিংবা মুনাফাকৃত টাকা খরচ করা হবে না।
চাঁদা প্রধান কারী ব্যক্তি পেনশন স্কিম অনুযায়ী মাসিক হারে যত টাকা প্রদান করবে বছর শেষে জমা দেয়া টাকার সাথে মুনাফা যুক্ত হবে। পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণকারী ব্যক্তি বছর শেষে ইউ পেনশন অফিসিয়াল ওয়েবসাইটে (https://www.upension.gov.bd) প্রবেশ করে তার জমা দেয়া টাকা এবং মুনাফা হওয়া টাকার হিসেব দেখতে পারবেন।
কোন ব্যক্তির কাছে মাসিক চাঁদার টাকা দেয়া যাবে?
না, না, না। কোনো সরকারি চাকরিজীবী, গণ্যমান্য ব্যক্তি, বা যেকোন ব্যক্তির কাছে আপনার মাসিক পেনশনের চাঁদার টাকা দেওয়া যাবে না।
বাংলাদেশে প্রচলিত যেকোনো ব্যাংক, ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ড এবং মোবাইল ফিনান্সিয়াল সার্ভিস যেমন, বিকাশ, নগদ, রকেট, ডাচ বাংলা’র মাধ্যমে মাসিক চাঁদার টাকা জমা দিতে পারবেন।
পেনশন স্কিমে জমা টাকার নিশ্চয়তা কে দিবেন?
যেহেতু দেশের সরকার নাগরিকদের সর্বজনীন পেনশন সুবিধা প্রদান করার জন্য জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষকে নিযুক্ত করেছেন এবং পেনশন কর্তৃপক্ষ একটি সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান হওয়া র ফলে সরকার নিজেই পেনশন স্কিমে জমা টাকার প্রদান করবে।
পেনশনের চাঁদা প্রদানকারী মারা গেলে কে টাকা পাবেন
যেহেতু মানুষের হায়াত মওতের কথা বলা যায় না, যেকোনো সময় সে কারো মৃত্যু হতে পারে। এমতা অবস্থায় চাঁদা প্রদানকারী ব্যক্তি যদি সময় পূর্তির আগে মারা যায় তবে তার পেনশনের টাকা আবেদন করার সময় তিনি যাকে নমিনি নির্বাচন করেছিলেন সে পাবেন।
যাকে নমিনি করেছিলেন সেও যদি মারা যায় তবে সংশ্লিষ্ট স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠান যেমন ইউনিয়ন পরিষদ, থানা, ভূমি মন্ত্রণালয়, প্রয়োজন হলে যেকোনো ধরনের স্বায়ত্ব শাসিত প্রতিষ্ঠান প্রদত্ত সনদের ভিত্তিতে উত্তরাধিকারী নির্ধারণ করে জমা টাকা এবং মুনাফাসহ তাকে দেওয়া হবে।
উপসংহার
আজকের এই আর্টিকেলে সর্বজনীন পেনশন সম্পর্কে ১৩টি প্রশ্নের উত্তর সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। আশা করছি জাতীয় পেনশন সম্পর্কে আপনি সঠিক ধারণা পেয়েছেন। যদি আপনার আরও কিছু জানার থাকে তবে কমেন্ট সেকশনে আপনি প্রশ্ন করতে পারেন।
এবং সেই সাথে পেনশন সম্পর্কিত আপনার মূল্যবান মতামত প্রকাশ করতে পারেন। জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের সকল ধরনের আপডেট তথ্য পেতে এই ওয়েবসাইট নিয়মিত ভিজিট করুন। এবং ফ্রি ইমেল সাবস্ক্রাইশন করুন যাতে করে যে কোন ধরনের আপডেট মুহূর্তের মধ্যেই পেতে পারেন।