সম্প্রতি, রংপুরের পীরগাছায় হিযবুত তাওহীদের নেতাকর্মীদের ওপর জামায়াতে ইসলামী ও ছাত্র শিবিরের লোকজন হামলা চালিয়েছে এবং উক্ত হামলার ঘটনায় কয়েকজন মারা গিয়েছে দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া আরও দাবি করা হয়, হামলার মুহূর্তে সেনাবাহিনীর সদস্যরা সেখানে উপস্থিত ছিলেন।

ফেসবুকে প্রচারিত এমন ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে দেখা যায়, রংপুরের পীরগাছায় হিযবুত তাওহীদের নেতাকর্মীদের ওপর হামলার ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি মারা যাওয়ার দাবিটি সঠিক নয়। প্রকৃতপক্ষে, উক্ত হামলার ঘটনায় বেশ কয়েকজন আহত হলেও কেউ মারা যায়নি।
অনুসন্ধানে শুরুতে আলোচিত ভিডিওটি পর্যালোচনা করে রিউমর স্ক্যানার টিম। ভিডিওটির শিরোনামে দাবি করা হয়, সেনাবাহিনীর সামনেই হিযবুত তাওহীদের উপর হামলার ঘটনায় ৩/৪ জনের মরদেহ পরে আছে। ভিডিওতে বেশকিছু ব্যক্তিকে লাঠিসোটা দিয়ে মারপিট করতে দেখা যায়। এছাড়াও সেনাবাহিনী ও পুলিশের উপস্থিতিও ভিডিওতে লক্ষ্য করা যায়। পাশাপাশি ভিডিওতে একজন ব্যক্তিকে প্রশাসনের সামনে হিযবুত তাওহীদ এবং আমজনতার মধ্যে সংঘর্ষ চলছে এবং কয়েকটা লাশ পরে আছে এমনটা বলতেও শোনা যায়। ভিডিও ফুটেজেটিতে একাধিক ব্যক্তিকে মাটিতে পরে থাকতে দেখা যায়।
উক্ত ঘটনার বিষয়ে বিস্তারিত জানতে কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো এর ওয়েবসাইটে গত ২৪ ফেব্রুয়ারি রংপুরে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ‘এলাকাবাসীর’ সংঘর্ষ, ৬ বাড়িতে হামলা শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, হিযবুত তাওহীদের বিভাগীয় সভাপতি হওয়ায় রংপুরের পীরগাছা উপজেলার ছিদামবাজার এলাকায় অবস্থিত নিজের বাড়িতে দলের সদস্যদের নিমন্ত্রণ জানান আবদুল কুদ্দুস। উক্ত অনুষ্ঠানকে কেন্দ্র করে অনুষ্ঠানের আগেরদিন ২৪ ফেব্রুয়ারি ‘স্থানীয় বাসিন্দাদের’ সঙ্গে হিযবুত তাওহীদের নেতা-কর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। বিভাগীয় সভাপতিসহ ছয় কর্মী-সমর্থকের বাড়িতে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের অভিযোগ পাওয়া গেছে। যাতে উভয় পক্ষের ২৫-৩০ জন আহত হওয়ার তথ্যও পাওয়া যায় প্রতিবেদনে। তবে উক্ত প্রতিবেদনের কোথাও কারো মারা যাওয়ার তথ্য পাওয়া যায়নি।
এছাড়াও কি-ওয়ার্ড সার্চের মাধ্যমে উক্ত ঘটনায় একাধিক গণমাধ্যমে প্রকাশিত প্রতিবেদন (১, ২, ৩) পর্যালোচনা করে ভিন্ন ভিন্ন আহতের সংখ্যা পাওয়া গেলেও কারো মারা যাওয়ার তথ্য খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরবর্তীতে বিষয়টি অধিকতর নিশ্চিতে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নুরে আলম সিদ্দিকীর সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি রিউমর স্ক্যানারকে জানান, ওই সংঘর্ষে বেশ কয়েকজন আহত হয়েছে। তবে নিহত হওয়ার বিষয়টি সম্পূর্ণ মিথ্যা।
এবিষয়ে হিযবুত তাওহীদের রংপুর বিভাগের আমির আব্দুল কুদ্দুস শামীমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনিও একই তথ্য জানান।
সুতরাং, রংপুরের পীরগাছায় হিযবুত তাওহীদের নেতাকর্মীদের সঙ্গে ঘটা সংঘর্ষের ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি নিহতের তথ্যটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।