HomeRumorscannerযুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণপত্র ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আসেনি

যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণপত্র ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আসেনি


গতকাল (১১ জানুয়ারি) বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দলের (বিএনপি) পক্ষ থেকে এক ফেসবুক পোস্টে দাবি করা হয়, যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প “ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট”-এ যোগদানের জন্য বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে আমন্ত্রণ জানিয়েছেন। গত ১০ জানুয়ারি ট্রাম্পের পক্ষ থেকে ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট’ এর জন্য তারেক রহমান, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটি সদস্য ও চেয়ারপার্সন ফরেন অ্যাফেয়ার্স অ্যাডভাইজারি কমিটি সদস্য আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরীকে আমন্ত্রণ জানানো হয় বলে এই পোস্টে দাবি করা হয়৷ 

বিএনপি

এছাড়া, বিএনপির চেয়ারপারসনের প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খানকে উদ্ধৃত করে দেশের গণমাধ্যমগুলোতেও একই দাবিতে সংবাদ প্রচার করা হয়। এমন কিছু প্রতিবেদন দেখুন প্রথম আলো, মানবজমিন, ভোরের কাগজ।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্রে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণপত্র ট্রাম্পের পক্ষ থেকে আসেনি বরং ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট ফাউন্ডেশন’ নামে একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের এই আয়োজনের সাথে ট্রাম্প বা যুক্তরাষ্ট্র সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই। তাই ট্রাম্পের পক্ষ থেকে এমন আমন্ত্রণপত্র পাঠানোর দাবিটিও অবান্তর। 

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ট্রাম্পের আমন্ত্রণ সংক্রান্ত দাবিটি যাচাইয়ে যুক্তরাষ্ট্রের স্টেট ডিপার্টমেন্টে যোগাযোগ করে রিউমর স্ক্যানার৷ এ বিষয়ে জানতে চাইলে স্টেট ডিপার্টমেন্ট প্রেস অফিস থেকে রিউমর স্ক্যানারকে এই আয়োজনের আয়োজকদের সাথে আলাপ করতে পরামর্শ দেওয়া হয়। 

সে মোতাবেক অনুসন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ভয়েস অফ আমেরিকার ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের জানুয়ারিতে প্রকাশিত এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, এই অনুষ্ঠানটি আয়োজিত হয় অলাভজনক প্রতিষ্ঠান ‘ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট ফাউন্ডেশন’ দ্বারা। ২০২৩ সালের আগে এটি পরিচালিত হতো ফেলোশিপ ফাউন্ডেশন নামক একটি ধর্মীয় গ্রুপ দ্বারা।

১৯৫৩ সালে ডোয়াইট আইজেনহাওয়ার থেকে শুরু করে সকল মার্কিন প্রেসিডেন্টই বার্ষিক প্রেয়ার ব্রেকফাস্টে অংশগ্রহণ করেছেন বলে জানায় ভয়েস অফ আমেরিকা৷ গত বছরও বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন এই আয়োজনে অংশ নেন। 

এই তথ্যগুলোর সূত্রে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট ফাউন্ডেশনের ওয়েবসাইট খুঁজে বের করে রিউমর স্ক্যানার। এই ওয়েবসাইট পর্যবেক্ষণ এবং তথ্যগুলো বিশ্লেষণ করে মার্কিন সরকারের সাথে এই আয়োজনের কোনো সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। ফাউন্ডেশনটির বোর্ড মেম্বার হিসেবে বর্তমানে যারা রয়েছেন তাদের তালিকায় বর্তমান সরকারের কেউ নেই। এদের মধ্যে কয়েকজন সাবেক সিনেটর ও সাবেক রিপ্রেজেনটেটিভ রয়েছেন। বাকিরা ব্যবসায়ীসহ বিভিন্ন পেশায় আছেন। তবে এই আয়োজনে সম্মানসূচক কো-চেয়ার হিসেবে প্রতি বছরই অন্তত একজন সিনেটর বা রিপ্রেজেনটেটিভ থাকেন। চলতি বছরের আয়োজনে কো-চেয়ার হিসেবে রয়েছেন দুইজন সিনেটর। এরা হলেন সিনেটর ম্যাগি হাসান এবং সিনেটর রজার মার্শাল। এই ফাউন্ডেশন নিয়মিত ডোনেশন গ্রহণ করে থাকে। রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে এই ফাউন্ডেশনের সাথে যোগাযোগের চেষ্টা করা হলেও তাদের পক্ষ থেকে কোনো সাড়া মেলেনি।

রিউমর স্ক্যানারের পক্ষ থেকে বাংলাদেশে অবস্থিত যুক্তরাষ্ট্র দূতাবাসেও এ বিষয়ে জানতে যোগাযোগ করা হয়। পরবর্তীতে গণমাধ্যম সূত্রে দূতাবাসের একটি বক্তব্য পাওয়া যায়। এতে বলা হয়, “যুক্তরাষ্ট্র আইআরএফ সম্মেলন বা ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজন, পরিচালনা বা অর্থায়ন করছে না।” 

অর্থাৎ, এটা নিশ্চিত যে ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট আয়োজনের সাথে যুক্তরাষ্ট্র সরকারের সরাসরি কোনো সম্পৃক্ততা নেই। 

এ বিষয়ে আরো অনুসন্ধানে গত বছরের ২৩ নভেম্বর জেরেমিয়া কার্নেল ওয়াশিংটন নামে একটি ফেসবুক অ্যাকাউন্টে আলোচিত আয়োজনটির একটি আমন্ত্রণপত্রের ছবি সম্বলিত একটি রিলস পাওয়া যায়। এই অ্যাকাউন্টের সাথে যুক্ত আরেকটি অ্যাকাউন্টেও একই ছবিগুলো পাওয়া যায়। 

আমন্ত্রণপত্রটি পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, এটি পাঠানো হয়েছে ২০২৪ সালের ১৪ অক্টোবরের তারিখে। পাস্তর ওয়াশিংটন নামের এক ব্যক্তিকে পাঠানো পত্রটিতে ওয়াশিংটন ডিসির ওয়াশিংটন হিল্টনের আগামী ৫-৬ ফেব্রুয়ারি ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্টের আয়োজনে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে তাকে। ১৪০টির বেশি দেশ থেকে বন্ধু এবং নেতৃবৃন্দ এই আয়োজনে উপস্থিত হবেন বলে জানানো হয়েছে পত্রে। যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট এবং কংগ্রেসের সদস্যরাও আয়োজনের উপস্থিত থাকবেন বলে জানানো হলেও প্রেসিডেন্টের নাম উল্লেখ করা হয়নি। এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে, যুক্তরাষ্ট্রে গত বছরের ০৪ নভেম্বর প্রেসিডেন্ট নির্বাচন হয় যাতে বিজয়ী হন ডোনাল্ড ট্রাম্প। অন্যদিকে এই চিঠি ১৪ অক্টোবরের। অর্থাৎ, ট্রাম্পের নির্বাচনে জয় পাওয়ার আগেই এই চিঠি ইস্যু হয়েছে। তবে অন্য চিঠিগুলো সাম্প্রতিক সময়ে ইস্যু হলে তাতে ট্রাম্পের নাম থাকা অস্বাভাবিক নয়। আলোচিত এই আমন্ত্রণ পত্রে চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে। এরা হলেন রিপ্রেজেনটেটিভ বেন ক্লিন, রিপ্রেজেনটেটিভ জাচ ওয়াম্প, রিপ্রেজেনটেটিভ টম সউজ্জি, রিপ্রেজেনটেটিভ জেমস স্লাটারি।

unnamed 2025 01 12T193316.994
Collage: Rumor Scanner

রিউমর স্ক্যানার বিএনপির দাবিটির বিষয়ে জানতে দলটির চেয়ারপার্সনের প্রেস উইং-এর সদস্য শায়রুল কবির খানের সাথে কথা বলেছে। তিনি জানিয়েছেন, “আমেরিকার প্রেসিডেন্ট 

কিংবা আমেরিকার সরকার দাওয়াত দিয়েছেন এরকম করে বলিনি। এটা কেউ ভুল ব্যখ্যা করেছেন। ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট অনুষ্ঠানে দাওয়াত পেয়েছেন।” 

জনাব শায়রুল রিউমর স্ক্যানারকে জানিয়েছেন, দলটির কাছে এ বিষয়ে আসা চিঠিতে চারজনের স্বাক্ষর রয়েছে। এরা হলেন রিপ্রেজেনটেটিভ বেন ক্লিন, রিপ্রেজেনটেটিভ জাচ ওয়াম্প, রিপ্রেজেনটেটিভ টম সউজ্জি, রিপ্রেজেনটেটিভ জেমস স্লাটারি।

উপরোল্লিখিত চিঠিতেও একই ব্যক্তিদেরই স্বাক্ষর দেখতে পেয়েছে রিউমর স্ক্যানার। 

সুতরাং, যুক্তরাষ্ট্রের একটি অলাভজনক প্রতিষ্ঠানের ন্যাশনাল প্রেয়ার ব্রেকফাস্ট নামক আয়োজনকে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই আয়োজনে অংশ নিতে বিএনপি নেতাদের আমন্ত্রণপত্র পাঠিয়েছেন শীর্ষক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।

তথ্যসূত্র

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular