সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “আপনার মেয়েদের শয়তানদের হাত থেকে রক্ষা করুন। এই ভিডিওটি বাংলাদেশের, যেখানে এক হিন্দু মেয়েকে প্রকাশ্যে দিনের আলোয় এক মাওলানা দ্বারা নির্যাতনের শিকার হতে হয়েছে। যখন সমাজ জাতপাতের বিভক্তিতে বিভাজিত হয় এবং কেউ সংখ্যালঘু হয়ে পড়ে, তখন এমন ঘটনাই ঘটে।” (অনূদিত)
প্রচারিত ভিডিওটিতে দেখা যায়, মাদ্রাসা ছাত্র সদৃশ একজন ব্যক্তি একটি স্কুলছাত্রীকে জোর করে হেনস্তা করে। অর্থাৎ, দাবি করা হয়েছে, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের এবং হেনস্তার শিকার হওয়া মেয়েটি সংখ্যালঘু হিন্দু সম্প্রদায়ের।

উক্ত দাবিতে এক্সে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং গত ২০২৪ সালের মার্চের এবং হেনস্তার শিকার হওয়া মেয়েটি হিন্দু পরিবারের নয় বরং হিন্দু-মুসলিম ধর্মাবলম্বী মিশ্র পরিবারের।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলো পর্যবেক্ষণ করলে তাতে প্রচারিত দাবিটির সপক্ষে কোনো নির্ভরযোগ্য বিস্তারিত তথ্যপ্রমাণ পাওয়া যায়নি। প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম এটিএন নিউজের ইউটিউব চ্যানেলে “প্রকাশ্যে স্কুলছাত্রীকে জোর করে হাফেজের চুমু, অতঃপর যা ঘটলো” শিরোনামে ২০২৪ সালের ১৮ মার্চে প্রচারিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়।

উক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত ভিডিওটির দৃশ্য প্রদর্শিত হয় এবং ভিডিওটি সম্পর্কে বলা হয়, দিনাজপুরে এক স্কুলছাত্রীকে জোর করে চুমু দিয়েছে এক হাফেজ। ঐ কান্ডের পর তার পালিয়ে যাবার একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ভাইরাল ছড়িয়ে পড়ে। এর তিন ঘন্টার মধ্যে অভিযুক্ত হাফেজ সাখাওয়াত হোসেনকে আটক করেছে কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তাছাড়া, উক্ত প্রতিবেদনটিতে প্রচারিত ভিডিওটির প্রদর্শিত দৃশ্য পর্যবেক্ষণ করলে সিসি ক্যামেরায় তারিখ হিসেবে ১৭ মার্চ ২০২৪, রোববার দেখা যায়।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরে ২০২৪ সালের ১৮ মার্চে ‘স্কুলছাত্রীকে প্রকাশ্যে চুমু, যুবক গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “দিনাজপুরে ষষ্ঠ শ্রেণির ছাত্রীকে প্রকাশ্যে চুমু খেয়ে শ্লীলতাহানি ও আহত করার ঘটনায় সাখাওয়াত হোসেন নামে এক যুবককে গ্রেফতার করেছে পুলিশ।… পুলিশ জানায়, দিনাজপুর শহরের একটি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের ষষ্ঠ শ্রেণির এক ছাত্রী কালিতলায় চাচাতো বোনের বাসার উদ্দেশে রওনা হয়। এ সময় সাখাওয়াত হোসেন তার পিছু নেয়। ছাত্রীটি তার বোনের বাসার গেটের কাছে পৌঁছলে সাখাওয়াত হোসেন অতর্কিত তার মুখে জোরপূর্বক চুমু দিয়ে শ্লীলতাহানি ঘটায়। এ সময় স্কুলছাত্রী চিৎকার করার চেষ্টা করলে তার দুই গালে নখের আঁচড় দেয় সাখাওয়াত। এতে স্কুলছাত্রীর মুখে ও গালে বেশ জখম হয়। এরপর দ্রুত এলাকা থেকে পালিয়ে যায় সাখাওয়াত হোসেন।… সোমবার [১৮ মার্চ ২০২৪] আসামি সাখাওয়াত হোসেনকে আদালতে সোপর্দ করা হয়েছে।’

এ বিষয়ে সে সময় মেয়েটির এক আত্মীয়ের সাথে কথা বলে রিউমর স্ক্যানার জানতে পারে, মেয়েটা হিন্দু ধর্মাবলম্বী। রিউমর স্ক্যানার যাচাই করে দেখেছে, মেয়েটি এক মিশ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছেন, তার কিছু আত্মীয় মুসলিম। ওই সময় তার কিছু মুসলিম আত্মীয় ঘটনাটি নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমেও পোস্ট করেছিলেন।
সুতরাং, প্রায় ১ বছর আগে মিশ্র পরিবারের মেয়ের হেনস্তার ভিডিও সম্প্রতি প্রচার করে হিন্দু পরিবারের মেয়ে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।