সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একজন কিশোরীর ধারণকৃত একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “বিবস্ত্র নারী- উলঙ্গ দেশ, এ কেমন বাংলাদেশ | তরুণীকে সংঘবদ্ধভাবে ধ’র্ষণ! ইনুচ্চা এর কারান।”

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
উক্ত দাবিতে এক্সে (সাবেক টুইটার) প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে প্রদর্শিত কিশোরীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণ করা হয়নি বরং, তাকে তার মামাবাড়িতে মামা-মামিরা নানাভাবে নির্যাতন করেছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে প্রচারিত ভিডিওটির একাধিক কি-ফ্রেম নিয়ে রিভার্স ইমেজ সার্চ করলে ‘ক্যাট ওয়ার্ল্ড’ নামের একটি ফেসবুক পেজে গত ৮ মার্চে প্রচারিত একটি ভিডিও পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওটির তুলনা করলে ভিডিও দুইটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়।

ভিডিওটি সম্পর্কে ক্যাপশনে বলা হয়, “মামার বাড়ি কবিতার মতো বাস্তব কাহিনি..
“মামি আইলো লাঠি নিয়া পালাই পালাই”..কিন্তু রোজিনা পালাতে পারে নি.. দা*, প্লেট, গরম খুনতি, পুতারও বাদ যাই নি পায়ের আঙুল থেতলে দাওয়ার জন্য..”।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার গণমাধ্যম প্রথম আলো’তে “কিশোরীকে গরম খুন্তির ছেঁকা-নির্যাতন, মামা-মামি গ্রেপ্তার” শীর্ষক শিরোনামে গত ৭ মার্চে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরীর একটি ছবিও অস্পষ্টভাবে সংযুক্ত করা হয় যার সাথে আলোচিত কিশোরীর সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “নির্যাতনের শিকার রোজিনা আক্তার (১৫) চাঁদপুর সদর উপজেলার চান্দ্রা ইউনিয়নের বাখরপুর গ্রামের আলী আহম্মদ ভূঁইয়ার মেয়ে। এ ঘটনায় গতকাল (৬ মার্চ) রাতে চাঁদপুর মডেল থানায় নারী শিশু নির্যাতন আইনে মামলা করেছেন আলী আহম্মদ ভূঁইয়া। রোজিনা চাঁদপুর ২৫০ শয্যার সরকারি জেনারেল হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। মামলার এজাহারে বাদী উল্লেখ করেছেন, ‘এক বছর আগে রোজিনাকে ঢাকায় আমার বড় মেয়ের কাছে দিয়েছিলাম। সেখান থেকে আমাকে না জানিয়ে রোজিনার মামা রুবেল মোল্লা তাঁর প্রতিবন্ধী সন্তান রিফাতকে দেখাশোনা করার কথা বলে তাকে (রোজিনা) ঢাকায় বাসায় নিয়ে যান। কিন্তু রোজিনাকে গৃহকর্মীর কাজ করানো হতো। গত জানুয়ারিতে ঢাকা থেকে চাঁদপুরে চলে আসেন রুবেল মোল্লা ও তাঁর স্ত্রী রোকেয়া বেগম। শহরের বিষ্ণুদী মাদ্রাসা রোড এলাকার একটি ভাড়া বাসায় ওঠেন। এক বছর ধরে আমাদের সঙ্গে রোজিনাকে দেখা করতে এবং কথা বলতে দেননি তাঁরা। বৃহস্পতিবার বিকেলে রোজিনা মামা-মামির নির্যাতন সইতে না পেরে ঘর থেকে পালিয়ে যায়। এ সময় স্থানীয় লোকজন রোজিনার অবস্থা দেখে পুলিশকে খবর দেয়। পরে পুলিশ তাকে উদ্ধার করে প্রথম থানায় নিয়ে যায় এবং হাসপাতালে ভর্তি করায়।’
রোজিনা জানায়, নানা অজুহাতে মামা-মামি তাকে মারধর করত। ধারালো দা, ছুরি দিয়ে শরীরে আঘাত করেছে। পিঠে ব্লেড দিয়ে কেটে দিয়েছে। গরম খুন্তি দিয়ে ছেঁকা দিত। পায়ের আঙুলগুলো থেঁতলে দিয়েছে। ঠিকমতো খাবার দিত না। মা–বাবার সঙ্গেও দেখা বা কথা বলতে চাইলে দিত না। গতকাল বাসায় মামি ছিল না। তখন সে ঘর থেকে পালিয়ে বাইরে চলে আসে।”
তবে, উক্ত প্রতিবেদনে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হওয়ার বিষয়ে কোনো উল্লেখ করা হয়নি।
এছাড়া এ বিষয়ে মূলধারার গণমাধ্যম আরটিভির ফেসবুক পেজ ও সমকালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায় কিন্তু সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, মামা বাড়িতে নির্যাতনের শিকার হওয়া কিশোরীকে সংঘবদ্ধভাবে ধর্ষণের শিকার হওয়া তরুণী দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।
তথ্যসূত্র