সম্প্রতি, “”আরও বলো এক বিন্তে দুটি কুসুম। রোজার মাস বলে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে হামলা করেছে তৌহিদি জনতা।”’ শীর্ষক ক্যাপশনে একটি ভিডিও ইন্টারনেটে ছড়িয়ে পড়েছে। এক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের লেখা “মোরা এক বৃন্তে দুটি কুসুম হিন্দু-মোসলমান” কবিতাটি ব্যবহার করে ইঙ্গিত করা হয়েছে যে মুসলিমরা হিন্দুদের সম্পত্তির উপর হামলা চালাচ্ছে।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটি হিন্দুদের বাড়িতে হামলার দৃশ্যের নয় বরং, দিনাজপুরে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ভিডিওকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে ‘হেরাবন পাক দরবার শরীফ’ নামক ফেসবুক পেজ হতে উক্ত ঘটনার একটি ভিডিওসহ গত ০১ মার্চ প্রকাশিত একটি পোস্ট খুঁজে পাওয়া যায়। উক্ত ভিডিওটির সাথে প্রচারিত ভিডিওটির মিল রয়েছে।

পোস্টটির ক্যাপশনে বলা হয়, “দিনাজপুরে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ কয়েক হাজার টুপি দাড়ি পাঞ্জাবী পড়া মোল্লা! সবার হাতে একটি করে লাঠি! তারা নাকি সিরাতে মুস্তাকিম পরিষদ! দিনাজপুর জেলার ঘোড়াঘাট উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বীরাহিমপুর গ্রামে অবস্থিত রহিম শাহ ভান্ডারীর মাজার শরীফ ভাঙচুর করে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে তারা। লুট করেছে মাজারের সম্পদ! কতটা পৈশাচিক তারা, তাদেরকে দেখলেই বুঝতে পারবেন৷ ধর্ম তাদের হাতে কতটা অনিরাপদ, বুঝতে পারবেন। এই লেবাছসর্বস্ব মোল্লাদলই যে ধর্মজগতে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিকর, বুঝতে পারবেন। এজিদি ফিতনা আজ বাংলার রন্ধ্রে রন্ধ্রে! ধর্ম রক্ষায় হুসাইনী আত্মবলিদান আজ প্রয়োজন!” সাথে #মাজার_হামলা #ভাংচুর, #অগ্নিযোগ #লুট #চুরি হ্যাশট্যাগ ব্যবহার করা হয়েছে।
জাতীয় দৈনিক প্রথম আলোর ওয়েবসাইটে গত ২৮ ফেব্রুয়ারি “ঘোড়াঘাটে ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে মাজারে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ” শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, দিনাজপুরের ঘোড়াঘাট উপজেলায় তিন দিনব্যাপী ওরস আয়োজনের প্রস্তুতির মধ্যে ‘রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজার’-এ হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। শুক্রবার বিকেলে সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের ব্যানারে এলাকায় লাঠিমিছিল কর্মসূচির পর এই ভাঙচুরের ঘটনা ঘটে।”
এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম ঢাকা পোস্টের ওয়েবসাইটে ০১ মার্চ প্রকাশিত ‘দিনাজপুরে মাজারে হামলা চালিয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ’ শীর্ষক সংবাদ প্রতিবেদন থেকেও একই তথ্য জানা যায়৷ এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, “বিক্ষুব্ধ জনতার অভিযোগ, উপজেলার সিংড়া ইউনিয়নের বিরাহীমপুর গুচ্ছগ্রাম এলাকায় রহিম শাহ বাবা ভাণ্ডারীর মাজারে প্রতি বছর ওরশের নামে গান-বাজনা, মাদক সেবনসহ অশ্লীল কর্মকাণ্ড চলে আসছে। এর প্রতিবাদ করলেও তারা সেটি বন্ধ না করে ২ থেকে ৪ মার্চ পর্যন্ত বাৎসরিক ওরসের আয়োজন করে কর্তৃপক্ষ। এর প্রতিবাদে আজ লাঠি মিছিল বের করে বিক্ষুব্ধ জনতা। পরে ওরসের প্যান্ডেল ও মাজারে আগুন দেয় এবং ভাঙচুর করে তারা।’”
অর্থাৎ, সংবাদমাধ্যম থেকেও জানা যায় প্রচারিত ভিডিও-র হামলার ঘটনাটি মাজারের। এ হামলায় হিন্দু বাড়ির ক্ষয়ক্ষতির কোনো প্রমান পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, সীরাতে মুস্তাকিম পরিষদ নামের একটি সংগঠনের রহিম শাহ বাবা ভান্ডারী মাজারে ভাঙচুরের ঘটনাকে হিন্দু বিয়ে বাড়িতে মুসলিম জনতার হামলা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।