সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে করণীয় কি?- ৪টি পেনশন স্কিম 4 Pension Schemes
Www Pension Gov BD Registration-পেনশন রেজিস্ট্রেশন করার সঠিক উপায় (100% Latest update)
পেনশনের টাকা হারানোর ভয়, পেনশন স্কিম মুদ্রাস্ফীতি, রিটায়ারমেন্ট বয়স এবং ইউপেনশন রিলেটেড সকল ধরনের প্রশ্নের উত্তর এই আর্টিকেলে পেয়ে যাবেন।
এর মধ্যেই ১৭ আগস্টে ঘোষণা হয়ে গেছে যে আপনি যদি একজন সরকারি চাকুরিজীবী নাও হয়ে থাকেন তবুও সরকারের কাছ থেকে আপনি পেনশনের সুবিধা পাবেন। তবে যদি আপনার বয়স আ আঠারো বছরের বেশি হয়ে থাকে।
এইটাকে একদম সহজ বাংলায় আমরা বলতেছি সর্বজনীন পেনশন স্কিম। এইটা নিয়া মানুষের মনে মূলত দুইটা কনফিউশন আছে।
- নাম্বার ওয়ান কনফিউশন ভাই যদি আমি সরকারের কাছে টাকা রাখি, দুই দিন পর পরই তো শুনি ব্যাঙ্কের মধ্যে এই টাকা লোপাট হয়ে যায়। ঋণ খেলাপীরা নাকি টাকা পয়সা মাইরা দেয়। বুড়া বয়সে একসাথে অনেকগুলা টাকা পাবো। এই আশায় আমার এখনকার টাকা যদি সরকারের কাছে জমা রাখি। এই টাকাটা যে কেউ মাইরা দিবে না তার গ্যারান্টিটা কি?
- কনফিউশন নাম্বার দুই। ভাই মূল্যস্ফীতি বলতোতো একটা জিনিস আছে তাই না। সরকার আমারে যেই রেটে টাকা দিবে চল্লিশ বছর পরে যদি দেখি এই রেটটা মূল্যস্পীতি যেই হারে বাড়ছে সেটাকে বিট করতে পারতেসে না, আর সরকারের কাছে যত টাকা জমা রাখছি সেটার মূল্য একচুয়ালি কমে গেছে?
ওই মুহূর্তে আমি কি করবো আমারে একটু বলে দেন। প্রথমে আপনার এক নাম্বার কনফিউশানটা নিয়ে একটু কথা বলি।
পেনশনের টাকা হারানোর ভয়
দেখেন! এই যে এইরকম সর্বজনীন পেনশন স্কিম এই ব্যাপারটা কিন্তু পুরা পৃথিবীর ইতিহাসে নতুন না। এই যে ধরেন পেনশন সুবিধা ব্যবস্থা নিউজিল্যান্ড, নেপাল, ব্রুনাই, এইরকম কিছু দেশের মধ্যে কিন্তু এই পলিসি আগেই নেওয়া হইছে।
কিন্তু তাদের পলিসির সাথে আমাদের দেশের পলিসির অনেক পার্থক্য রয়েছে। পেনশন ব্যবস্থার পলিসি সম্পর্কে অন্যান্য দেশগুলোর সাথে আমাদের দেশের পার্থক্যগুলো নিচে তুলে ধরা হলো:
মেইন পার্থক্যটা হইতেছে, উন্নত দেশগুলাতে এই পেনশন স্কিমের টাকাটা সরকার যে দিবে এই টাকার পুরাটা ট্যাক্স রেভিনিউ থেকে আসে।
মূলত এটা ট্যাক্স রেভিনিউ থেকে ম্যানেজ করা হয়। অন্যান্য সোর্সও থাকতে পারে। কিন্তু আমাদের যে পেনশন স্কিম আছে ওইখানে সরকার দারিদ্র সীমার নিচে যে মানুষরা আছে তাদের টাকার পঞ্চাশ পার্সেন্ট কিন্তু নিজেরাই দিবে।
উদাহরণস্বরূপ : তার মানে আপনি যদি দারিদ্র সীমার নিচে থাকা কোনো মানুষ হন আপনার যদি পেনশনের টাকার জন্য একশো টাকা দেওয়া লাগতো তার মধ্যে পঞ্চাশ টাকা আপনার দেওয়া লাগবে আর বাকি পঞ্চাশ টাকা সরকার নিজেই দিয়ে দিবে।
এক্ষেত্রে যারা দারিদ্র সীমার নিচে বাস করে তাদের জন্য সমতা পেনশন স্কিম রয়েছে। যেখানে মাসিক চাঁদার হার নির্ধারণ করা হয়েছে ১০০০ এক হাজার টাকা। এই পেনশন স্কিমে যারা অংশগ্রহণ করবেন তারা ৫০০ টাকা দিবেন এবং সরকার ৫০০ টাকা দিবে। এইটাই হচ্ছে স্কিমের একটা প্রধান অংশ।
অনেকেই যেটা ধারণা করতেছেন এই জিনিসটা আমাদের বাজেটের উপরে একটা নেগেটিভ ইমপ্যাক্ট ফেললেও ফেলতে পারে। এখন তাহলে আমাদের একটু হিসাব করা দরকার।
বাংলাদেশের কত পার্সেন্ট মানুষ এই দারিদ্র্য সীমার নিচে থাকে
২০২৩ সালে বাংলাদেশ প্রবার্তি watcher একটা রিপোর্ট বলতেছে বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যার বিশ ২০% মানুষ দারিদ্র সীমার নিচে অবস্থান করছে।
পেনশনের টাকার ক্ষেত্রে বয়স্ক পপুলেশন কতজন আছে, এইটা জানা খুবই ইম্পর্টেন্ট একটা প্যারামিটার। যেই মানুষগুলো দারিদ্র সীমার নিচে বসবাস করতো তাদের মধ্যেও অলডারলি পপুলেশন বা বয়স্ক জনসংখ্যা ১% এক পার্সেন্টেজেই আছে।
তার মানে টোটাল পেনশন স্কিমে যে জনগোষ্ঠীর তালিকা আসে তাদের মধ্যে বিশ পারসেন্ট ২০% অ্যাকাউন্টের পঞ্চাশ পার্সেন্ট খরচ সরকারের নিজেকেই বহন করতে হবে। প্রশ্ন করতে পারেন!
পেনশনের ৫০% টাকা কোথা থেকে আসবে?
এটা আলটিমেটলি আমাদের পকেট থেকেই আসবে। সরাসরি ইন্ডিকেট করে হয়তো বলা যাবে না। কিন্তু নেক্সট বাজেটে হয়তো বা এটার এক্সপেরিয়েন্সের জন্য একটা আলাদা সেক্টর ক্রিয়েট হলেও হতে পারে।
এইখানে আরেকটা ফ্যাক্টর হইতেছে, জিডিপি। জিডিপি রেশিও ÷ ভগ্নাংশের উপরে ট্যাক্স নিচে জিডিপি। যেই অনুপাতটা হয় এটাই হচ্ছে ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও।
এটা দিয়ে আপনি বুঝতে পারবেন একটা দেশের সরকার কতটা ভালোভাবে তার দেশের অর্থনীতিকে কন্ট্রোল করতেছে। একটা জিনিস চিন্তা করেন যদি আমার দেশের জিডিপি অনেক হাই হয় তাহলে, আমার দেশের মানুষের ট্যাক্স দেওয়ার ক্ষমতাও বেশি।
এগুলো পড়তে পারেন,
- সুরক্ষা পেনশন স্কীম রেজিস্ট্রেশন-কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- প্রবাস পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন-কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- প্রগতি পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন- কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- সমতা পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন- কত টাকা দিলে কত টাকা পাবেন?
- সর্বজনীন পেনশন স্কিম রেজিস্ট্রেশন প্রসেস স্টেপ বাই স্টেপ
আমার দেশের ট্যাক্স আরো বেশি পরিমাণে আসা উচিত। সো উপরে যদি ট্যাক্স থাকে, নিচে যদি জিডিপি থাকে তবে জিডিপির তুলনায় ট্যাক্স দেওয়ার পরিমাণ যত বেশি বাড়বে, এই রেশিওটাও কিন্তু তত বেশি বাড়বে।
এই রেশিওটাকে যদি আপনি পার্সেন্টেজে নিয়ে যান তাইলে আইডিয়াল হিসাবে বা আদর্শ হিসাব মতে এই রেশিওটা চল্লিশ পার্সেন্টের আসে পাশে হওয়া উচিত।
চল্লিশ পার্সেন্টের নিচে থাকা মানে বুঝবেন ওই দেশের মানুষ ট্যাক্স দেয় না। চল্লিশ পার্সেন্টের উপরে যদি থাকে তাহলে বুঝবেন ওই দেশের মানুষ খুবই ভালো। ওরা অনেক ট্যাক্স দেয় সরকারেকে। আপনাদের একটা কৌতূহল এখন জাগতেছে।
বাংলাদেশে ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও কত?
শুনলে হাসতে পারেন। বাংলাদেশে ২০২১ দুই হাজার একুশ সালে এই ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ছিল মাত্র ৭% সাত পার্সেন্ট। ৭% সাত পার্সেন্ট।
সহজ কথায় আমাদের দেশের মানুষজন রেগুলার বেসিসে ট্যাক্স দেয় না। তো সরকার যেহেতু ট্যাক্স পাইতেছে না এই যে পেনশন স্কিমে দারিদ্র সীমার নিচের এত জন মানুষকে সরকার হেল্প করবে, এই টাকাটা দেওয়ার জন্য সরকারকে অন্য কোন একটা সেক্টরের উপরে হাত দিতে হবে।
একটা জিনিস খেয়াল রাখবেন, শুধুমাত্র কানাডা আর সিঙ্গাপুর বাদে অন্য যেসব দেশ এই টাইপের সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালু করছে।
তাদের সবার ট্যাক্স টু জিডিপি রেশিও ২০% বিশ পারসেন্টের উপরে। এটার কারণে শুধু মাত্র ট্যাক্সের টাকা দিয়েই অনেকটাই তাদের এই স্কিমের কাজটা রান করানো যায়।
আর এই সমস্যা যে আমাদের একদম প্রথমবারের মতনই হইতেছে ব্যাপারটা রকম না। ট্যাক্স কম আশায় (২০২২-২০২৩) দুই হাজার বাইশ, তেইশ সালে সোশ্যাল সিকিউরিটি সেক্টরের বাজেট পাঁচ পার্সেন্ট থেকে ৪.৯% চার দশমিক নয় পার্সেন্টে কমানো হয়েছিল।
এডুকেশন এন্ড টেকনোলজিতে বাজেট ১৪.৮ চোদ্দ দশমিক আট থেকে ১৪.৭% চোদ্দো দশমিক সাত পার্সেন্টে নামানো লাগছিল। খাদ্য অধিদপ্তরের বিভিন্ন বাজেট এবং ওপেন মার্কেট অপারেশনের জন্য বাজেট ১০% দশ এবং ১১% এগারো পার্সেন্ট কমানো হয়েছিল।
এটার একটা সলিউশান আছে। কাজটা করছিল ইংল্যান্ড। যেহেতু এই ধরনের পেনশন স্কিমে পেনশন মেনলি পাবে প্রাইভেট সেক্টরে যারা কাজ করে তাঁরা। তো প্রাইভেট সেক্টরে যে কর্মীরা আছে তাদের সাথে অর্থাৎ যারা মালিক পক্ষ, যারা জব দেয় এমপ্লয়িদের তাদেরকেও এই স্কিমের মধ্যে ওরা আওতাভুক্ত করছিলো।
মানে হইতেছে মনে করেন আপনি এক্স কোম্পানিতে কাজ করেন, আপনি মনে করেন পাঁচ হাজার টাকার পেনশনের স্কিম নির্বাচন করছেন। এখন এই স্কিমের মধ্যে আপনি দিবেন তিন হাজার টাকা আর আপনার কোম্পানি দিবে দুই হাজার টাকা।
তার মানে আপনাকে যদি এই কোম্পানি চাকরি দিতে যায় তাইলে আপনার বর্তমান বয়স কত আছে এটাও এখন একটা বড় ফ্যাক্টর হিসেবে কাজ করবে।
তবে এই বিষয়টা কার্যকর করলে একটা সমস্যা থেকেই যায়। সরকারকে তখন নির্ধারণ করতে হয়. হবে তাদের মার্কেট বা পেনশনের কন্ট্রোল কতটুকু নিজের হাতে রাখবে। ইংল্যান্ড কিন্তু শুরুর দিকে পুরোটাই প্রাইভেট সেক্টরের হাতে ছেড়ে দিয়েছিল।
বাংলাদেশ কিন্তু এখন সেটা করতেছে না। এ ডিসিশনটা খুব একটা খারাপ ডিসিশন নয় অনেকে মনে করে। সর্বজনীন পেনশন স্কিমের প্রগতি পেনশন নামের একটা স্কিম আছে। সেই স্কিমের আন্ডারে এমপ্লয়ারদেরকে পেনশনের টাকার একটা অংশ দিতে হবে এমপ্লয়ির পেনশন স্কিমের মধ্যে।
তবে আর একটা ফ্যাক্টর বাংলাদেশ রাখছে যেটা সচরাচর রাখতে দেখা যায় না। আর তা হলো আপনি যদি এম্প্লয়ার হয়ে থাকেন অর্থাৎ আপনি মালিক, আপনি জব দেন, তবে আপনার জন্য পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণ করাটা অপশনাল।
যেহেতু এটা অপশনাল রাখা হয়েছে, তাই এখন দেখার বিষয় বাংলাদেশের প্রাইভেট সেক্টর এই স্কিমে কতটুকু পার্টিসিপেট করে। এই (ইউপেনশন) ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিমের আগে বাংলাদেশে এরকম আরো দুইটা স্কিম ছিল।
বাংলাদেশে আগে আরো পেনশন স্কিম ছিলো?
হ্যাঁ অবশ্যই বাংলাদেশের সর্বজনীন পেনশন স্কিম কর্মসূচির পূর্বে আরো দুইটি পেনশন কর্মসূচি ছিল।
- ওএএ বা ওল্ড এজ অ্যালাউেন্স-Old Age Allowance (OAA)
- সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ব্যবস্থা।
ওএএ বা ওল্ড এজ অ্যালাউেন্স-Old Age Allowance (OAA)
১৯৯৮ উনিশশো আটানব্বই সালে শুরু হওয়া OAA বা ওল্ড এজ অ্যালাউেন্স। কিন্তু এই স্কীমে মান্থলি অ্যালাউন্স খুবই কম ছিল অর্থাৎ প্রতি মাসে ১০০ থেকে ৩০০ টাকার মত।
তৎকালীন সময়ে বয়স্ক বা বৃদ্ধ মানুষদের ফিউচারের জন্য একটি পেনশন ব্যবস্থা চালু হয়েছিল। যে স্কিমের নাম দেওয়া হয়েছিল ওল্ড ইজ অ্যালাউন্স।
সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন স্কিম।
আরেকটা যে স্কিম ছিল সেটি এখনো আছে আর তা হলো সরকারি চাকরিজীবীদের যে পেনশন দেয়া হয় সেটি। pension for retired government employees and their families.
অর্থাৎ যারা সরকারি চাকরিজীবী রয়েছেন নির্দিষ্ট বয়সসীমা পার হওয়ার পর চাকরি থেকে অবসর নিলে সরকার তাদেরকে পেনশন স্কিমের আইন অনুযায়ী তাদেরকে প্রতি মাসে পেনশন দিয়ে থাকে।
বর্তমানে যে সকল পেনশন স্কিম চালু রয়েছে এবং সে সকল পেনশন স্কিমের চাঁদা সম্পর্কে জানতে নিচের আর্টিকেলগুলো পড়ুন।
- সমতা সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন
- সুরক্ষা সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন
- প্রগতি সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন
- প্রবাস সর্বজনীন পেনশন স্কিম মাসিক চাঁদার হার সম্পর্কে জানুন
পেনশনের টাকা কি চুরি হয়ে যাবে?
আপনার পেনশনের টাকা চুরি হয়ে যাবে কিনা এ ব্যাপারে হয়তো আপনি টেনশনের মধ্যে আছেন। ছোট্ট একটি গল্পের মাধ্যমে আপনাকে উদাহরণ দিচ্ছি, যদিও এটি গল্প নয় এটি একটি বাস্তবিক প্রেক্ষাপট। তাই মনোযোগ সহকারে পড়ুন।
এক লোক বিয়ে করেছে। সে বিয়েতে বিভিন্ন মানুষকে দাওয়াত দিয়েছে। বন্ধুবান্ধবদেরকেও দাওয়াত দিয়েছে। বন্ধুবান্ধবদের মধ্যে এলিয়েন আসছে, সুন্দর পিচাই আসছে,জনসিনাও আসছে।
লোকের মা লোক গুলোকে দেখে জিজ্ঞেস করতেছে! এদেরকে তুমি কেন দাওয়াত দিয়েছো এদেরকে তো আমরা চিনি না।
এই মুহূর্তে একটি লজিক্যাল Explaintion হতে পারে তার মাকে জবাব দেয়ার জন্য। লোকটি তার মাকে বলছে সে ছোটবেলা থেকে অনলাইনে তাদের সাথে বড় হয়েছে।
আরো পড়ুন,
- কিভাবে অনলাইনে পেনশনের টাকা জমা দিবেন দেখে নিন
- সর্বজনীন পেনশন সুবিধা পেতে করণীয় কি – ৪টি পেনশন স্কিম
দেখেন আপনি যদি স্ক্যাম ব্যাপারটা নিয়ে একটু ভালোভাবে চিন্তা করেন তবে দুনিয়ার সব কিছুই আপনি কোন না কোন দিক থেকে একটা স্ক্যাম বলতে পারেন। ওই হিসাব করলে সঞ্চয় পত্র একটা স্ক্যাম, ব্যাংকে টাকা রাখলে ব্যাংক ও একটা স্ক্যাম, তারপরেও তো আপনি সঞ্চয়পত্রে টাকা রাখেন, তারপরেও আপনি ব্যাংকের মধ্যে টাকা রাখেন।
কারণ এই সলিউশনটাকে আপনি বেছে নিছেন যেই সলিউশনটা অ্যাটলিস্ট সাহারা কিংবা ডেস্টিনের মত পিরামিড স্ক্যামের থেকে বেটার।
অনেকটা আপনার যখন কোন আসল বন্ধু থাকে না তখন এলিয়েনদের আপনার বন্ধু হিসেবে পরিচয় দিতেই হবে। অনেস্টলি আপনার মনের মধ্যে এখন হয়তো প্রশ্ন আসতেছে। কোন কোন দেশে বড় বড় প্রজেক্ট এবং পেনশনের টাকা চুরি হয়ে গেছে?
কোন কোন দেশে পেনশনের টাকা চুরি হয়ে গেছে?
আচ্ছা এরকম কি কোন দেশের মধ্যে হয়েছে কোনো প্রজেক্টে বা টেনশন কর্মসূচিতে? যারা বলছে তোমরা টাকা দাও আমরা তোমাকে পেনশন দিবো! তোমরা অল্প অল্প করে টাকা জমা করো কয়েক বছর পরে তোমাদের অনেক টাকা দিবো? এবং তাদের কথা অনুযায়ী পেনশন পাবার জন্য টাকা জমা দেয়ার পর টাকা পয়সা নিয়ে সরকার দেশ ছেড়ে পালিয়েছে?
সত্যি কথা বলতে এইরকম example আমি অনেক খুঁজছিলাম। তবে কাছাকাছি লেভেলের কয়েকটা পাইছি। কিন্তু exactly যে পেনশন স্কিম এর কথা উল্লেখ করা হয়েছে এবং চাঁদা প্রদান করার পর তাদের পেনশন দিতে পারেনি এইরকম সঠিক কোন তথ্য এখন পর্যন্ত আমি পাইনি।
ইন্ডিয়াতে পেনশন স্কিম ফেল প্রজেক্ট
ইন্ডিয়াতে একটা অ্যাক্ট ছিল। ২০০৫ দুই হাজার পাঁচ সালের ঘটনা। মহাত্মা গান্ধী national rural employment guarantee act. এই অ্যাক্টের আন্ডারে সরকার বলছিলো যারা গরীব মানুষ আছে একটা সার্টেইন লিমিটের নিচে, ওদেরকে সরকার নিজের থেকে কর্মসংস্থানের সুযোগ দিবে।
ওরা কাজ করবে তার বিনিময়ে বেতন নেওয়া যাবে। এই প্ল্যানটা অনেকটাই ফেল করছে। তার কারণ অনেক ছিল। যারা কাজ করেও পরে বেতন পায় নাি। ভিতরে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা ছিল। অনেক জায়গায় দুর্নীতি হয়েছে। সবকিছু মিলিয়ে এই প্ল্যানটা ফেল করছর।
আর্জেন্টিনার পেনশন স্কিম ফেল প্রজেক্ট
আর্জেন্টিনাতে এরকম একটা স্কিম চালু হয়েছিল। (Universal Pension for the Elderly ) পেনশন ইউনিভার্সাল ফর দা এলডার্লি। এই প্ল্যানটাতে আর্জেন্টাইন সরকার লং টার্মে যায়। তবে পরবর্তীতেতারা বেশ বড় একটা ঝামেলায় পড়েছিলো। যখন ওদের দেশের বয়স্ক জনসংখ্যা অনেক বেড়ে গেছিলো। তবে এই প্ল্যানটা ফেল করছে এরকম ডিরেক্টলি বলা যাবে না।
ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম কেন দরকার?
ইউপেনশন অর্থাৎ ইউনিভার্সাল পেনশন স্কিম কর্মসূচির কয়েকটা গুরুত্বপূর্ণ কারণ আছে। সবচেয়ে বড় কাণ হচ্ছে,
মানুষের গড় আয়ু কিন্তু আস্তে আস্তে বেড়ে গেছে। চিকিৎসা সেবা উন্নত হওয়ায় মানুষ এখন দেরিতে মৃত্যুবরণ করছে। এতে করে দেশের একটা বড় অংশ কিন্তু সিনিয়র সিটিজেন ক্যাটাগরিতে চলে যাচ্ছে।
যেহেতু ভবিষ্যতে বয়স্ক পপুলেশন কিন্তু আরো অনেক বেশি হবে, তাই এই বৃদ্ধ জনগোষ্ঠীকে এখন দেখভাল করার মতন মানুষ থাকে না।
এর প্রধানতম কারণ বাংলাদেশে কিন্তু এখন নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির সংখ্যা অনেক বেড়ে গেছে। বেশি সংখ্যক মানুষ এখন জয়েন্ট ফ্যামিলি ছেড়ে পৃথকভাবে বসবাস করা শুরু করেছে। এই ধারণা থেকে বলা যায় বাংলাদেশের ইকোনমি কিন্তু এখন একটা ট্রানজিশানাল পিরিয়ডের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে।
আমাদের বর্তমান সোসাইটির মধ্যে বয়স্ক লোকের জনসংখ্যা যাদের বয়স পঁয়ষট্টি বছর কিংবা তার থেকে বেশি এটা অনেক বৃদ্ধি পাচ্ছে।
২০১৫ দুই হাজার পনেরো সালে পাবলিশড হওয়া একটা রিসার্চ পেপারেই বলতেছে ২০৫১ দুই হাজার একান্ন সালের মধ্যে আমাদের দেশের টোটাল পপুলেশনের ২০% বিশ পারসেন্ট এর বয়স ষাট বছর পার হয়ে যাবে। তাই সর্বজনীন পেনশন স্কিম আসলেই ব্যক্তি জীবনের অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়।
সর্বজনীন পেনশন রিটায়ারমেন্ট বয়স
বর্তমান সর্বজনীন পেনশন স্কিমের দিকে ইঙ্গিত করে অনেকে বলতেছে এই পেনশন স্কিমের মধ্যে রিটায়ারমেন্টের বয়স ধরা হয়েছে ৬০ ষাট বছর।
সহজ ভাষায় বলি, সরকার রিটায়ারমেন্ট এজ যদি কমায় ফেলে তবে, জনগণ এটাতে খুব অসন্তোষ হয়। এটা সাধারণ পাবলিক ভালো চোখে দেখে না।
এই জন্য বিশ্বের অনেক দেশেই এই পেনশন রিটায়ারমেন্টের বয়স পঁয়ষট্টি কিংবা সাতষট্টি বছরের মতো। কারণ আপনার রিটায়ারমেন্টের বয়স যদি কমিয়ে ষাট বছর দেয়া হয় তবে আপনি তো কম সময় কাজ করতে পারবেন।
যদি পঁয়ষট্টি হইত কিংবা সাতষট্টি হইতো আপনি আরো পাঁচ কিংবা সাত বছর এক্সট্রা কাজ করতে পারতেছেন, টাকা আয় করতে পারতেছেন।
একই সাথে আমাদের গড় আয়ু যেহেতু বাড়তেছে, আপনি জানেন আপনি ৬০ ষাট বছরের থেকে আরো কিছু বেশি বয়স হয়তো বাঁচবেন ইনশাল্লাহ। সো আপনাকে যদি আগেই রিটায়ার করে দেওয়া হয় আপনি বাকি সময়টা কিন্তু চলতে গেলে বহুত ক্যাচালে পড়বেন।
রিসেন্টলি ফ্রান্সেই কিন্তু একটা বড় আন্দোলন হইছে যেখানে মূল দাবি ছিল আমাদের রিটায়ারমেন্ট বয়স ৬২ বাষট্টি বছর রাখতে পারবা না। এটাকে চৌষট্টি বছরে নিতে হবে।
সেইখানে আমাদের পেনশন স্কিমে কিন্তু রিটায়ারমেন্ট বয়স ধরা হয়েছে ষাট বছর জিনিসটা একটু হইলো এলার্মি। হয়তো বা ভবিষ্যতে এই বিষয়ে কিছু রিফর্মেশন আসতে পারে।
পেনশন স্কিম মুদ্রাস্ফীতি হবে কি?
পেনশন স্কিম ইনফ্লেশান রেট (Inflation rate)। মনে করুন, বর্তমান পেনশন স্কিমের মধ্যে আপনাকে ইন্টারেস্ট রেট অফার করা হয়েছে ৮% আট পার্সেন্ট। বর্তমান সময়ের মতো ইনফ্লেশান রেট না থেকে বিশ বছরে পরে যদি আমাদের মূল্যস্ফীতির হার পেনশনের মুনাফার পার্সেন্টেরও বেশি বেড় যায়! তখন যে রিটার্ন আমরা পাব এই টাকা থেকে, এটা তো ২% দুই পার্সেন্টের কাছাকাছিও যাবে না।
তখন এই স্কিমের মধ্যে কি অ্যাডজাস্টমেন্ট করতে হবে বা সরকার কি পদক্ষেপ নিবে তা সকলের জানা দরকার।
প্রশ্ন করতে পারেন, আমাদের এই যে পেনশন স্কিম এটাকে এমন ভাবে ফর্মুলা করা হয়েছে কি! যাতে ইনফ্লেশান সাথে সামঞ্জস্য রাখে মুনাফার টাকা বৃদ্ধি হবে?
এই প্রশ্নের এখনো পর্যন্ত কোনো সোজাসুজি উত্তর আমি বা আমরা কেউই পাইনি। অর্থ বিভাগের অতিরিক্ত সচিব গোলাম মোস্তফা বলেছেন, ওনারা একটা ফর্মুলা দিয়ে এই ইন্টারেস্টের বিষয়টা ঠিক করছেন।
তবে ওই ফর্মুলার ডিটেইলস এখনো জানা যায়নি। তবে বেশিরভাগ দেশেই কিন্তু এই সর্বজনীন পেনশন স্কিম ইনফ্লেশান অ্যাডজাস্টেড না।
আর ডেভেলপিং কান্ট্রি গুলোর জন্য এটা একটা বড় প্রবলেম। এমনকি আমেরিকার মতো দেশও Inflation এর সাথে পেনশন স্কিম ব্যালান্স করতে বেশ বড় ধরনের হিমশিম খাচ্ছে।
২০১৭ দুই হাজার সতেরো সালে আপনি একটা কোল্ড ড্রিঙ্কসের কাঁচের বোতল বারো টাকায় খাইছেন। মাত্র ৬ ছয় বছরের মধ্যে সেইটার দাম এখন পঁচিশ টাকা বা তরো বেশি।
আপনি ১০০০ এক হাজার টাকা সরকারের কাছে ১০% দশ পার্সেন্ট ইন্টারেস্ট রেখে দিচ্ছেন। যদি আজ থেকে চল্লিশ বছর পর গিয়ে দেখেন এই টাকা ইনফ্লেশনের ঠেলায় এমন চাঙ্গে উঠছে যে এটা কোন টাকাই না! তাহলে পেনশন পাবার আশায় চাঁদা দিয়ে আপনার আমার লাভ হইলো কি?
মাসে মাসে এরকম এক হাজার টাকা না রেখে এটা অন্য কোথাও ইনভেস্ট করলেও ভালো হইতো তাই না! এই প্রশ্নের একটি সঠিক উত্তর কিন্তু অ্যাডমিনিস্ট্রেশনকে দিতে হবে। কি বলেন আপনি!
এই আর্টিকেল লেখার মূল উদ্দেশ্য ছিল আপনাদের দুইটা কনফিউশন দূর করা। আমি জানি কনফিউশন দূর হয় নি। কনফিউশন দুটি ছিলো:
- আমার পেনশনের এই টাকা মাইর বা চুরি যেতে পারে কিনা?
- অধিকারী মুদ্রাস্ফীতি বেড়ে গেলে পেনশনের মুনাফা বৃদ্ধি হবে কিনা?
একটু চিন্তা করে দেখুন আপনার টাকা মাইর যাওয়া বা চুরি হওয়ার সম্ভাবনা কতটুকু। যদি সাহারা কিংবা destiny এর মতন পিরামিড স্কিমে টাকা রাখতেন তার থেকেও কম। একটা দেশের গভর্নমেন্টকেও যদি আপনি বিশ্বাস করতে না পারেন, অ্যাটলিস্ট আপনার ইনভেস্টমেন্টের হিসাবেও, তাহলে আর কি! কিছুই বলার নেই।
যদি আপনি এরকম টাকা মাইর বা চুরি হওয়ার কথা চিন্তা করে থাকেন তাহলে কিন্তু, আপনার সঞ্চয় পত্রও করার কোন দরকার নেই। সরকারি কোন ব্যাংকের মধ্যেও টাকা রাখার কোন মানে নেই।
তবে আমার মতে এত ভয় পাওয়ার কোন কারণ নেই। আমার পার্সোনাল বিশ্বাস। এটা নিয়ে এতো টেনশন করার কিছু নেই। যেটা নিয়ে আপনি টেনশন করতে পারেন সেটা হচ্ছে confusion নাম্বার ২ দুই (Inflation) বা মূল্যস্ফীতি।
যেটা হচ্ছে পেনশন রিটার্ন রেট। যেটা একদম real pension return rate balance করতে পারবে কিনা সরকার এটা নিয়ে চিন্তা করা জরুরি। সামনের দিনগুলোতে দেখার অনেক বিষয় রয়েয়ে। যাই হোক আমি আমার পার্সোনাল এক্সপেরিয়েন্স থেকে বলছি নিঃসন্দেহে আপনি ইউপেনশন ওয়েবসাইটে গিয়ে সর্বজনীন পেনশনের যে কোন একটি স্কিমে অংশগ্রহণ করতে পারেন। সহজ উপায়ে অনলাইনে সর্বজনীন পেনশন রেজিষ্ট্রেশন করার নিয়ম দেখে নিন।
এক্সপার্টরা কিন্তু এটাও বলতেছে পুরা অবকাঠামো ঠিক মতো না সাজিয়ে না গুছিয়ে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে এই ধরনের পেনশন স্কিমের কথা ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। এটা সাধারণ জনগণের ইকোনমিক লাভের কথা চিন্তা করে, নাকি সামনে নির্বাচন আসতেছে এই উপলক্ষে আপনাকে একটা কিছু করতে হবে এই চিন্তা করে তা কিন্তু এখনো প্রশ্নবিদ্ধ।
কারণ অনেকেই মনে করতেছে এই ডিসিশানটা অনেকটা জরুরী এবং তাড়াহুড়ো করে ঘোষণা দেয়া হয়েছে। ব্যাপারটা নিয়ে আরো অনেক সময় নিয়ে প্ল্যান করে হয়তো করা উচিত ছিল। তাহলে সর্বজনীন পেনশন স্কিম আরো বেটার করা যেত।
Homepage | upension |
Category | সর্বজনীন পেনশন |
Last Update | Just Now |
Written by | Ashraful Islam |
শেষ কথা।
সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থা অত্যন্ত কার্যকরী একটি বিষয় যা দেশের সর্বজনীন নাগরিকদের শেষ বয়সে গিয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। তবে যে যাই বলুক আল্টিমেটলি সর্বজনীন পেনশন স্কিম এটা আসলেই খুব গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় এবং এটার দরকার ছিল। যেই সিকিউরিটির জন্য মানুষ সরকারি চাকরির পিছনে ঘুরতো, তার একটা অংশ এটলিস্ট মানুষ প্রাইভেট সেক্টরে জব বা চাকরি করেও পাবে। আপাতত যেভাবেই শুরু হোক না কেন, শুরু যে হয়েছে এটাই সবচেয়ে বড় কথা।