সম্প্রতি, নীলফামারীতে ওয়াজ মাহফিলের স্টেজ দখল করে জামায়াতে ইসলামী ও ইসলামী ছাত্রশিবিরের তাণ্ডব দাবিতে একটি ভিডিও সামাজিক মাধ্যমে প্রচার হতে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার।
উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, নীলফামারীতে ওয়াজ মাহফিলের স্টেজ দখলের দাবিটি সঠিক নয় বরং, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনাকে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
দাবির সত্যতা যাচাইয়ে জাতীয় দৈনিক ‘আজকের পত্রিকা’ এর ওয়েবসাইটে গত ০৬ জানুয়ারী ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে নীলফামারীতে অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুর শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন খুঁজে পাওয়া যায়। প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওর কী-ফ্রেমের সাথে সাদৃশ্য লক্ষ্য করা যায়।
প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘নারায়ে তাকবির’ স্লোগান দিয়ে নীলফামারী সদর উপজেলার একটি স্কুল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুরের অভিযোগ উঠেছে। রোববার সদর উপজেলার বাবরীঝাড় স্কুল অ্যান্ড কলেজ মাঠে এ ঘটনা ঘটে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, রোববার সন্ধ্যায় ওই স্কুল মাঠে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করে স্থানীয় যুবকেরা। এতে স্থানীয় শিল্পী ছাড়াও রংপুরের শিল্পীদের অংশ নেওয়ার কথা ছিল। তবে শুরুর আগেই তোপের মুখে ভন্ডুল হয়ে যায় অনুষ্ঠানটি। এ সময় কয়েকজন যুবক মঞ্চে উঠে ‘নারায়ে তাকবির আল্লাহু আকবার’ স্লোগান দিতে থাকেন।
তবে স্থানীয় কয়েকজন বলেন, ‘ওই মাঠটি বিদ্যালয়ের মাঠ হলেও ঈদগাহ মাঠ হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া মাঠের পাশেই রয়েছে মসজিদ। ধর্মীয় প্রতিষ্ঠানের পাশে অনুষ্ঠানটির আয়োজন করায় রুখে দিয়েছি।’
আয়োজক কমিটির সদস্য বাসু ইসলাম বলেন, ‘আমরা পুলিশ প্রশাসন ও স্কুল কর্তৃপক্ষ সবার অনুমতি নিয়ে অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছি। এখানে চেয়ারম্যান ও জামায়াতের লোকজন অনুষ্ঠান পণ্ড করেছে। আমাদের প্রায় ১০ লাখ টাকার মালামাল ভাঙচুর করেছে।’
তিনি বলেন, ‘অনুষ্ঠান নিয়ে স্থানীয়রা কেউ কিছু বলেন নাই, পুরো ইন্ধনটা চেয়ারম্যান দিয়েছেন। তাঁদের এসব করার উদ্দেশ্য কী? এটাই জানতে চাই আমরা। আমাদের এই ক্ষতিপূরণ তাঁদেরই দিতে হবে।’
জানতে চাইলে স্থানীয় ইউপি চেয়ারম্যান মু. জাহাঙ্গীর আলম শাহ্ ফকির বলেন, ‘৫ আগস্টের পর আমার ইউনিয়নে কোনো সংঘাত হোক এটা আমি আশা করি নাই। কাউকে সংঘাতে জড়ানোর সুযোগও দিই নাই, কেউ সংঘাতে জড়িয়ে পড়ুক সেটাও আমি চাইনি। সন্ধ্যায় সংঘাত হবে এটা আমি আশঙ্কা করেছিলাম। পরে আয়োজক ও স্থানীয়দের অনুরোধ করেছিলাম, কেউ সংঘাতে জড়িয়ে পড়বেন না। তাঁরা কেউ কথা রাখেননি, পরে পুলিশ প্রশাসন পরিস্থিতি স্বাভাবিক করে।’
সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম আর সাঈদ বলেন, খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পুলিশ পাঠানো হয়। দুই পক্ষকে সমাধানের জন্য বসতে বলা হয়েছে। এখানে মূলত প্রোগ্রামের আগে আয়োজকেরা স্থানীয় চেয়ারম্যানের সঙ্গে যোগাযোগ ঠিকমতো করেননি। এ কারণে এমনটা হতে পারে। সমাধান না হওয়া পর্যন্ত এ প্রোগ্রাম স্থগিত থাকবে। সমাধান হলে প্রোগ্রামটি আবার হতে পারে।
এছাড়া, একই বিষয়ে সমকালের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকেও প্রায় একই তথ্য জানা যায়।
সুতরাং, নীলফামারিতে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মঞ্চ ভাঙচুরের ঘটনাকে ওয়াজ মাহফিলের মঞ্চ দখলের ঘটনা দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।