HomeRumorscannerডাকাতির ঘটনা বর্ণনার ভিডিও বিকৃত করে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা দাবিতে...

ডাকাতির ঘটনা বর্ণনার ভিডিও বিকৃত করে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণের ঘটনা দাবিতে প্রচার


সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি ভিডিও প্রচার করে দাবি করা হয়েছে, “মানুষ কতটা নি*ষ্ঠুর হলে, মায়ের সামনে থেকে মেয়েকে তুলে নিয়ে ধ*র্ষণ করে। আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি!”

উক্ত ভিডিওটিতে একজন নারীকে উক্ত ঘটনার বর্ণনা দিতে দেখা যায়। তিনি বলেন, “আমার মেয়েরে ধরে নিয়ে যাইতেছে৷ আমি বলছি বাবা আমার হাফেজ মেয়ে, পর্দা করে। জীবন ভিক্ষা দাও৷ বাইরে কীভাবে… বলো কীভাবে বাইর হয়ে যাই। বলে বাইর হ বাড়ি থেকে চুপচাপ কোণার রুমে নিছে৷ এই বাংলাদেশটা আশা করি নাই। ছোটবেলা থেকে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি এই কবিতাটা পড়ছি। বিদেশ থেকে বাংলাদেশে যখন এয়ারপোর্টে ল্যান্ড করছিলাম, তখন প্রতিটা মানুষ বলছে আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি। এই বাংলা চাই নাই, যেই বাংলায় আমার মাতৃভূমিতে আমার নিরাপত্তা নাই। আমার ঘরে আমার নিরাপত্তা নাই।”

1 707

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।

ফ্যাক্টচেক

রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, প্রচারিত ভিডিওটিতে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণের কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি বরং উক্ত নারী একজন বাড়ির ম্যানেজার এবং মোহাম্মদপুরের উক্ত বাড়িতে ডাকাতির বর্ণনা দিচ্ছিলেন এবং তিন মাস পুরোনো উক্ত ভিডিওটি বিকৃত করে আলোচিত দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এ বিষয়ে অনুসন্ধানে মূলধারার গণমাধ্যম ‘মাইটিভি বাংলাদেশ’-এর ইউটিউব চ্যানেলে গত বছরের ৩০ নভেম্বরে “মোহাম্মদপুরে ডা’কা’তি’র ভ’য়া’বহ বর্ণনা দিলেন বাড়ির ম্যানেজার” শীর্ষক শিরোনামে প্রায় সাড়ে পাঁচ মিনিটের একটি ভিডিও পাওয়া যায়। ভিডিওটির শিরোনাম থেকে জানা যায়, ঘটনাটি বর্ণনাকারী নারী মোহাম্মদপুরে ডাকাতি হওয়া বাড়ির ম্যানেজার এবং ভিডিওটিতে তিনি উক্ত ঘটনারই বর্ণনা দিচ্ছিলেন। 

1 708
Comparison : Rumor Scanner

উক্ত ভিডিওটির প্রায় ২ মিনিট ৫৫ সেকেন্ড পরবর্তী সময়ের সাথে প্রচারিত ভিডিওটির সাদৃশ্য পাওয়া যায়। উক্ত সম্পূর্ণ ভিডিওটি দেখলে জানা যায়, একদল ডাকাত উক্ত বাড়িতে এসে গাড়িতে করে সব জিনিসপাতি নিয়ে চলে যায়৷ মেয়ের বিষয়ে ফেসবুকে ভাইরাল উক্ত অংশটি মূল ভিডিওতে শুনলে লক্ষ্য করা যায়, মূল ভিডিওতে উক্ত ঘটনায় ধর্ষণের কথা বলা হয়নি বরং এ বিষয়ে মূল ভিডিওতে বলা বাক্যের একটা অংশ ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বাদ দেওয়া হয়েছে। মূল ভিডিওতে মেয়ের বিষয়ে বলা হয়, “আমার মেয়েরে ধরে নিয়ে যাইতেছে, আমি বলছি বাবা আমার হাফেজ মেয়ে, পর্দা করে৷ জীবন ভিক্ষা দাও। বাইরে কীভাবে বলো বাইর হইয়া যাই। বলে বাইর হ বাড়ির থেকে চুপচাপ। কোণার রুমে নিয়েছে নিয়ে ঐ ভাড়াটিয়ার ফ্রিজ, মেশিন, জিনিসপত্র এগুলা সব বাইর করে নিয়া গেছে”। কিন্তু প্রচারিত ভিডিওটিতে “কোণার রুমে নিয়েছে নিয়ে” এরপরের বাক্যাংশ কেটে ভিডিওতে বলা এর আগের অন্য একটি অংশ বসানো হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে, মূল ভিডিওটিতে কোণার রুমে নেওয়ার পর অন্য ভাড়াটিয়ার ফ্রিজ, মেশিন, জিনিসপত্র নেওয়ার কথা বলা হলেও প্রচারিত ভিডিওটিতে তা বাদ দেওয়া হয়েছে এবং ধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।

এছাড়া, এ বিষয়ে চ্যানেল২৪ এ গত ৩ ডিসেম্বরে ‘মোহাম্মদপুরে এবার ট্রাক নিয়ে ডাকাতি’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি সংবাদ প্রতিবেদনে উক্ত নারীর কথা বলার দৃশ্য প্রদর্শিত হয় এবং সংবাদ প্রতিবেদনটিতে এ বিষয়ে বলা হয়, গত ২৮ নভেম্বর রাত ৩ টার পর মোহাম্মদপুরের লাউতলায় অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মালামাল ট্রাকে করে তুলে নিয়ে যায় ডাকাতরা। উক্ত ঘটনার বিষয়ে একাধিক ব্যক্তির বর্ণনাও যুক্ত করা হয়। তবে ধর্ষণের বিষয়ে উক্ত প্রতিবেদনটিতে উল্লেখ পাওয়া যায়নি।

মূলধারার সংবাদমাধ্যম ‘আজকের পত্রিকা’র ওয়েবসাইটে ‘মোহাম্মদপুরে ফের ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে মালামাল লুট’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ নভেম্বরে এ বিষয়ে প্রকাশিত একটি সংবাদ প্রতিবেদন পাওয়া যায়৷ উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “রাজধানীর মোহাম্মদপুরে আবারও অস্ত্রের মুখে একটি পরিবারকে জিম্মি করে ডাকাতির ঘটনা ঘটেছে। আজ বৃহস্পতিবার ভোররাতে মোহাম্মদপুরের বছিলাসংলগ্ন লাউতলা এলাকার ৮ নম্বর সড়কের ১০ নম্বর বাড়িতে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় ভুক্তভোগী তত্ত্বাবধায়ক নাসিমা বেগম মোহাম্মদপুর থানায় একটি লিখিত অভিযোগ করেছেন।

তিনি অভিযোগ করেন, আজ [২৮ নভেম্বর] ভোররাতে একটি ডাকাত দল দেশীয় অস্ত্র নিয়ে টিনশেড বাড়িতে মই দিয়ে ভেতরে প্রবেশ করে। এ সময় বাড়ির ভেতরে থাকা সিসি ক্যামেরা তারা ধারালো অস্ত্র দিয়ে ভেঙে ফেলে। অস্ত্রের মুখে বাড়ির সবাইকে একটি কক্ষের ভেতরে জিম্মি করে। এরপর চালায় লুটপাট। প্রতিটি কক্ষের আসবাব ভেঙে চালায় তল্লাশি। নগদ টাকা, স্বর্ণালংকার লুট করে নিয়ে যায়। তিনি আরও বলেন, ‘ডাকাত দলে ১০-১৫ জন সদস্য ছিল। বাড়ির আলমারি, টিভিসহ সব ভাঙচুর করে টাকাপয়সা ও স্বর্ণালংকার নিয়ে যায়। ডাকাতদের পায়ে ধরে বাড়ির নারীদের ইজ্জত রক্ষা করেছি। তারা বাড়ির দলিলপত্রও নিয়ে গেছে।’”

অর্থাৎ, উক্ত প্রতিবেদনেও ধর্ষণ ঘটার বিষয়ে কোনো উল্লেখ পাওয়া যায়নি বরং বলা হয়েছে “ডাকাতদের পায়ে ধরে বাড়ির নারীদের ইজ্জত রক্ষা করেছি” যা থেকে বুঝা যায় যে ধর্ষণ ঘটেনি।

একইরকম তথ্য জানা যায় মূলধারার সংবাদমাধ্যম যুগান্তরের ওয়েবসাইটে ‘মোহাম্মদপুরে ফের ভয়াবহ ডাকাতি, অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে লুটপাট’ শীর্ষক শিরোনামে গত ২৮ নভেম্বরে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদন থেকে।

সুতরাং, মোহাম্মদপুরে গত বছরের ২৮ নভেম্বর বাড়িতে ডাকাতির বর্ণনা দেওয়া এক নারীর ভিডিও ডিজিটাল প্রযুক্তির সহায়তায় বিকৃত করে মায়ের সামনে মেয়েকে ধর্ষণ করা হয়েছে দাবিতে প্রচার করা হয়েছে যা মিথ্যা এবং প্রচারিত ভিডিওটি বিকৃত।

তথ্যসূত্র

RELATED ARTICLES

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here

Most Popular