কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফির বাড়িতে আগুনে পুড়ে গেছে । গত ১২ ফেব্রুয়ারি দিবাগত রাত ৩টা ৫৫ মিনিটে কাফি নিজ ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজে এক স্ট্যাটাসের মাধ্যেমে তার বাড়িতে আগুন দেওয়া হয়েছে অভিযোগ করেন।
এরই প্রেক্ষিতে, “নিজের বাড়িতে নিজে আগুন দিয়ে অগ্নিসংযোগের নাটক। যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার কন্টেন্ট ক্রিয়েটর কাফি” শীর্ষক একটি দাবি ইন্টারনেটে প্রচার করা হয়েছে।

উক্ত দাবিতে ইউটিউবে প্রচারিত ভিডিও দেখুন এখানে (আর্কাইভ) এবং এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার করা হয়নি বরং কোনোপ্রকার তথ্য প্রমাণ ছাড়াই আলোচিত দাবিটি প্রচার করা হয়েছে।
অনুসন্ধানের শুরুতে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত ভিডিওতে ব্যবহৃত ফুটেজগুলো পর্যবেক্ষণ করে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ভিডিওর শুরুতে এক সংবাদ উপস্থাপকের সংবাদ পাঠের ফুটেজ দেখানো হয়। উপাস্থাপককে বলতে দেখা যায়, “কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে যৌথ বাহিনীর অভিযানে গ্রেফতার করা হয়েছে, অভিযোগ ছিল সে নিজের বাড়িতে নিজেই অগ্নি সংযোগের নাটক সাজিয়েছে।”
তবে, পর্যবেক্ষণে উপস্থাপকের কথা বলার ভঙ্গির সাথে অডিওর অসামঞ্জস্যতা পরিলক্ষিত হয়।
এছাড়া ভিডিওতে দাবি করা হয়, যৌথ বাহিনীর অনুসন্ধানে উঠে এসেছে অগ্নিসংযোগের মূল হোতা কাফি নিজেই। আরও বলা হয়, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে নুরুজ্জামান কাফি পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন এবং পরে রাজনৈতিকভাবে সুবিধা আদায়ের উদ্দেশ্যে আওয়ামী লীগ ও ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে অভিযোগ তুলেন।
নুরুজ্জামান কাফি পূর্বপরিকল্পিতভাবে নিজ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করেন দাবিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কোনো প্রতিবেদনে প্রকাশ করেছে কিনা জানতে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করেও মূলধারার গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে কোনো তথ্যপ্রমাণ খুঁজে পাওয়া যায়নি।
তাছাড়া, নুরুজ্জামান কাফি এর ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজ পর্যবেক্ষণ করে দেখা যায়, তিনি নিয়মিত ফেসবুকে সক্রিয় রয়েছেন।
অর্থাৎ, এটি নিশ্চিত যে নুরুজ্জামান কাফির গ্রেফতারের দাবিটি মিথ্যা।
আলোচিত ভিডিওগুলোর থাম্বনেইলে কাফির গ্রেফতারের দাবিতে প্রচারিত ছবিগুলো আলাদাভাবে যাচাই করে দেখেছে রিউমর স্ক্যানার টিম।
ছবি যাচাই ০১
ছবিটি রিভার্স ইমজে সার্চ করে ডেইলি সান এর ওয়েবসাইটে ২০২০ সালের ৮ নভেম্বর প্রকাশিত ‘Efran Salim, bodyguard put on 5-day remand’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, এটি ঢাকার আদালত প্রাঙ্গণে তোলা হাজী সেলিমের ছেলে ইরফান সেলিমের ছবি। সেদিন (৮ নভেম্বর) একাধিক মামলায় ইফরান সেলিমকে রিমান্ড মঞ্জুর করেন আদালত।
অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিটি এডিটেড। এখানে ইরফান সেলিমের মূখমন্ড সম্পাদনার মাধ্যমে প্রতিস্থাপন করে কাফির মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।
ছবি যাচাই ০২
ছবিটি রিভার্স ইমেজ সার্চ করে বাংলাদেশ সংবাদ সংস্থা (বাসস) এর ওয়েবসাইটে গত ২১ জানুয়ারী প্রাকাশিত ‘কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদার গ্রেফতার’ শীর্ষক শিরোনামের প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত ছবির সাদৃশ্য খুঁজে পাওয়া যায়।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদারকে গ্রেপ্তার করেছে সেনাবাহিনী। গত ১৬ জানুয়ারি দিবাগত রাত তিনটায় সেনাবাহিনী কুমিল্লা ২৩ বীর অভিযান চালিয়ে নগরীর মোঘলটুলি বাসা থেকে তাকে গ্রেফতার করে।
অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিটিও এডিটেড। এখানে কুমিল্লা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতা কবির শিকদারের গ্রেপ্তারকৃত ছবিতে কাফির মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।
ছবি যাচাই ০৩
ছবিটি রিভার্স ইমজে সার্চ করে সময় টিভির ওয়েবসাইটে ২০২৪ সালের ১০ ডিসেম্বর ‘ফেনীতে ভুয়া সেনা সদস্য আটক’ শীর্ষক শিরোনমে প্রকাশিত প্রতিবেদনের ফিচার ইমেজের সাথে আলোচিত ছবির সাদৃশ্য রয়েছে।

প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, ফেনীর মহিপাল সার্কিট হাউজ রোড এলাকা থেকে মো. নাজমুল হাসান (২৫) নামের এক ভুয়া সেনা সদস্যকে গ্রেফতার করেছে যৌথবাহিনী। সোমবার (২০২৪ সালের ৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যা ৭টার দিকে মহিপাল এলাকা থেকে তাকে আটক করে।
অর্থাৎ, কাফির ছবি দাবিতে প্রচারিত এই ছবিও এডিটেড। এখানে গ্রেপ্তারকৃত ভুয়া সেনা সদস্যের মুখমণ্ডলে কাফির মুখমণ্ডল বসানো হয়েছে।
সুতরাং, নিজের বাড়িতে নিজে আগুন দেওয়ার অভিযোগ কনটেন্ট ক্রিয়েটর নুরুজ্জামান কাফিকে গ্রেফতার করা হয়েছে শীর্ষক দাবিটি সম্পূর্ণ মিথ্যা।