সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দাবি প্রচার করা হয়েছে, “এইমাত্র পাওয়া : ব্যাপক গোলাগু.লি, ৯২ জন নি.হত শুধু রাজধানী উত্তরাতেই”।

উক্ত দাবিতে ফেসবুকে প্রচারিত পোস্ট দেখুন এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ), এখানে (আর্কাইভ)।
ফ্যাক্টচেক
রিউমর স্ক্যানার টিমের অনুসন্ধানে জানা যায়, ঢাকার উত্তরায় গোলাগুলিতে ৯২ জন নিহত হওয়ার সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রায় তিন মাস পূর্বে ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ঢাকার উত্তরায় ৯২ জন নিহতের সংবাদকে সাম্প্রতিক সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এ বিষয়ে অনুসন্ধানে আলোচিত দাবিতে প্রচারিত পোস্টগুলোর মন্তব্য সেকশন পর্যবেক্ষণ করলে তাতে দাবিটির সপক্ষে কিছু পোস্টে তথ্যসূত্র হিসেবে ব্লগস্পটের ডোমেইন ব্যবহার করে তৈরি ‘টাইমনিউজবিডি৪’ নামের একটি সাইট এবং কিছু পোস্টে ‘প্রিয়বাংলা২৪’ নামের ওয়েবসাইটে ‘এই মাত্র পাওয়া : ৯২ জন নি..হত শুধু রাজধানী উত্তরায়-ই’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনের লিঙ্ক সংযুক্ত করতে দেখা যায়। ‘টাইমনিউজবিডি৪’-এ প্রকাশিত উক্ত সংবাদ প্রতিবেদনটি গত ২২ ফেব্রুয়ারি প্রকাশ করা হলেও ‘প্রিয়বাংলা২৪’ এ প্রকাশের তারিখের উল্লেখ পাওয়া যায়নি।
উক্ত প্রতিবেদনগুলো থেকে জানা যায়, “রাজধানীর উত্তরায় ছাত্র-জনতার আন্দোলনে পুলিশ, আওয়ামী লীগ ও তার অঙ্গ সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীদের হামলায় ৯২ জন নিহত হয়েছেন। নিহতদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সংখ্যক ছিলেন শিক্ষার্থী। শনিবার (৭ ডিসেম্বর) এক সংবাদ সম্মেলনে ‘জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্স’ নামক একটি সংগঠন এ তথ্য জানায়। সংগঠনটির মুখপাত্র ফান্তাসির মাহমুদ উত্তরার ফ্রেন্ডস ক্লাব মাঠে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পড়ে শোনান। উপস্থিত ছিলেন সংগঠনের আহ্বায়ক সালেহ মাহমুদ রায়হান, সদস্যসচিব ফয়সাল মাহমুদ, যুগ্ম আহ্বায়ক আহমদ সামরান এবং উত্তরায় নিহত ১০ জন শহীদের স্বজনরা।”
অর্থাৎ, প্রচারিত দাবিটিতে দাবিটির সপক্ষে সংযুক্ত প্রতিবেদনগুলোর শিরোনামে ‘এইমাত্র পাওয়া’ বলে উল্লেখ করা হলেও বিস্তারিত অংশে বলা হয়েছে নিহতের সংখ্যাটি ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময়কালের যা প্রায় সাত মাসের পুরোনো সংবাদ। কিন্তু ফেসবুকে সংবাদটি ‘এইমাত্র পাওয়া’ উল্লেখ করে সাম্প্রতিক দাবিতে প্রচার করা হয়েছে।
এরই সূত্র ধরে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে মূলধারার সংবাদমাধ্যম প্রথম আলো’র ওয়েবসাইটে গত বছরের ৮ ডিসেম্বরে ‘ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তরায় ৯২ জন নিহত’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন পাওয়া যায়। উক্ত প্রতিবেদনটিতে একই তথ্যের উল্লেখ পাওয়া যায়।
এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে জানা যায়, “জুলাই রেভল্যুশনারি অ্যালায়েন্সের তালিকা অনুযায়ী, শহীদদের মধ্যে শিক্ষার্থীরাই সবচেয়ে বেশি, ২৫ জন। এ ছাড়া চাকরিজীবী ১৯ জন, ১০ জন ব্যবসায়ী, ৫ জন পরিবহনচালক, ২ জন ইমাম, ১ জন চিকিৎসক ও অন্যান্য পেশার ১৯ জন। তবে ১১ জনের পেশার বিষয়ে নিশ্চিত হওয়া যায়নি।. .. ” উক্ত তথ্যের সাথেও ‘টাইমনিউজবিডি৪’ ও ‘প্রিয়বাংলা২৪’ নামে ওয়েবসাইটে প্রকাশিত প্রতিবেদনটির তথ্যের সাদৃশ্য পাওয়া যায়।
এছাড়া এ বিষয়ে অনলাইন সংবাদমাধ্যম বাংলা ট্রিবিউনের ওয়েবসাইটে গত বছরের ০৭ ডিসেম্বরে ‘জুলাই-আগস্ট আন্দোলন: উত্তরায় ৯২ নিহতের তালিকা প্রকাশ’ শীর্ষক শিরোনামে প্রকাশিত আরেকটি প্রতিবেদন থেকেও একইরকম তথ্য জানা যায়। এছাড়াও উক্ত প্রতিবেদনটি থেকে নিহতের সময়কাল হিসেবে ‘১৮ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট’ জানা যায়। এ থেকে নিশ্চিত হওয়া যায় যে প্রচারিত সংবাদটি সাম্প্রতিক সময়ের নয় বরং প্রায় সাত মাসের পুরোনো।
এছাড়া, আলোচিত দাবির বিষয়ে প্রাসঙ্গিক কি-ওয়ার্ড সার্চ করলে সাম্প্রতিক সময়ে ঢাকার উত্তরায় গোলাগুলিতে ৯২ জন নিহত হওয়ার বিষয়ে কোনো সংবাদ গণমাধ্যম বা নির্ভরযোগ্য সূত্রে পাওয়া যায়নি।
সুতরাং, প্রায় তিন মাস পূর্বে ‘জুলাই রেভ্যুলেশনারি এলায়েন্স’ নামক স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন কর্তৃক প্রকাশিত প্রায় গত বছরের জুলাই-আগস্ট আন্দোলনে ঢাকার উত্তরায় ৯২ জন নিহতের সংবাদকে সাম্প্রতিক সংবাদ দাবিতে প্রচার করা হয়েছে; যা বিভ্রান্তিকর।